জবি ছাত্রলীগ কমিটিতে স্থান পেতে বিতর্কিতদের দৌড়ঝাপ
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-০২ ১৭:৩৯:২৮
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিতর্কিতরাই আলোচনায় বেশি আসছেন। নেতৃত্ব পেতে ছাত্রনেতাদের বাসায় প্রাণপণে দৌড়ঝাপ চলছে তাদের।
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর গত ৩০ মার্চ সম্মেলন হলেও আজ রবিবার পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। বির্তকিত ও অভিযুক্তদের হাতে নেতৃত্ব দিতে তারা তালিকা করেছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৩ অক্টেবর এফএম শরিফুল ইসলামকে সভাপতি এবং এসএম সিরাজুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এক বছরের পরিবর্তে প্রায় সাড়ে ৪ বছর থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটিই চালায় জবি শাখা ছাত্রলীগের যাবতীয় কার্যক্রম। যদিও বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতারই ছাত্রত্ব শেষ, অনেকে আবার বিবাহিত ও চাকরিজীবী, কেউ আবার লাগামছাড়া হয়ে সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে আছেন।
নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসার আলোচনায় আছেন সাইদুর রহমান জুয়েল, সাইফুল্লাহ ইবনে আহমেদ সুমন, তরিকুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম টিটন, হারুনুর রশিদ, শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল, তানভীর রহমান খান, জহির রায়হান আগুন, সুরঞ্জন ঘোষ, শামীম রেজা, মো. ইব্রাহিম ফরাজী, আনিসুর রহমান শিশির এবং নুরুল আফসার।
নিজেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের অনুসারী ও তার প্রার্থী পরিচয় দিয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ তিন বছর ধরে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ায় এবং বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও দীর্ঘদিন তিনি অবৈধভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন। কিছুদিন আগে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগে তার কয়েকজন অনুসারী আটক হয়। তার অনুসারীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় নিরীহ ছাত্রদের অহেতুক মারপিট, বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও নিয়মিত সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাসে নতুন বিল্ডিং’র নীচে আন্ডার গাউন্ডে মাদক ইয়াবা-গাঁজার আসর বসায়। গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চারজন সাইকেল চোরকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করে পুলিশে দেন। অভিযোগ রয়েছে তারা হারুনের অনুসারীদের যোগসাজসে সাইকেল চুরি করতো।
আর আনিসুর রহমান শিশিরকে সংগঠন বর্হিভূত নানা অপকর্মের দায়ে স্থায়ী বহিস্কার করা হয়। একাডেমিক পরীক্ষায় নকলের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাকে এক বছরের জন্য বহিস্কার করে। মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করায় তার বিরুদ্ধে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বাংলাবাজারের জননী কুরিয়া সার্ভিস। এজন্য তাদেরকে ভর্ৎসনাও করেন কেন্দ্রের দুই শীর্ষ নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, শিশিরের বড় ভাই নেত্রকোনা জেলা সাবেক ছাত্রদল ও বর্তমান যুবদল নেতা। তার বাবা বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
তরিকুল ইসলাম তুর্য শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে বেড়ান। অথচ ২৯ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তার ‘যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ পদ তারা অনুমোদন দেননি।
সাইদুর রহমান জুয়েলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রনেতা হওয়ার বয়স শেষ হয়ে গেছে। আর যাদের বিরুদ্ধে সদরঘাটে নিয়মিত চাদাবাজীর অভিযোগ রয়েছে তারা হলেন- ইব্রাহিম ফরাজী, মমিনুর রহমান, তানভীর রহমান খান, সুরঞ্জন ঘোষ, শামীম রেজা, জহির রায়হান আগুন, আফসার, টিটন।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন অভিযুক্ত কাউকে ছাত্রলীগের কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হবে না। এছাড়া ছাত্রলীগের কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণা করা হবে বলেও জানান জাকির।