ফের মেয়রের চেয়ারে বুলবুল

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-০৫ ১৪:৪০:৪১


Mayor-Bulbulফের নগর ভবনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। দ্বিতীয় দফা সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থাগিত হওয়ায় নগর ভবনে ফিরছেন নির্বাচিত এ মেয়র। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বিঘ্নে নগর ভবনে যান তিনি। বাধাবিপত্তি ছাড়াই প্রবেশ করেন মেয়রের দফতরে।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন ও সচিব মাহাবুবুর রহমান আগে থেকেই দরজার পাশে অপেক্ষা করছিলেন। মেয়র বুলবুলকে তারা সেখানে স্বাগত জানান। এরপর বুলবুল নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেন। চেয়ারে বসার আগে দোয়া পড়েন ও মোনাজাত করেন বুলবুল।

পরে দফতরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন মেয়র। এসময় নগরীর যাবতীয় সকল সমস্যা বাকি সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন বুলবুল। এরপর তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।

এর আগে নগরীর উপশহরের বাসা থেকে অটোরিকশায় চেপে নগর ভবনে পৌঁছান মেয়র। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী। নগর ভবনে পৌঁছালে বিএনপি পন্থী কাউন্সিলররা মেয়রকে স্বাগত জানান।

উচ্চ আদালতের আদেশে ২৩ মাস পর বুলবুল গত ২ এপ্রিল সকালে মেয়রের দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে যান। কিন্তু মেয়রের দফতর তালা দিয়ে চলে যান দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম। এনিয়ে দিনভর উত্তেজনা ছিল নগর ভবনজুড়ে।

দীর্ঘ নাটকীয়তা শেষে বেলা ৩টার দিকে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শরীফ উদ্দীন ও সচিব মাহাবুবুর রহমান পুলিশের সহায়তায় তালা ভেঙে দফতরে প্রবেশ করান বুলবুলকে। মেয়রের চেয়ের বসার মিনিট পাঁচেকের মাথায় আবারো বরখান্তের আদেশের ফ্যাক্সবার্তার কথা মেয়রকে জানান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

সাময়িক বরখাস্তের ওই আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট করেন বুলবুল। একই দিন এই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বুলবুলকে সবশেষ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলও দিয়েছেন।

রুলে বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের এই স্থগিতাদেশের ফলে বুলবুলের মেয়রের দায়িত্ব পালনে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী আমিনুল হক হেলাল।

জানা গেছে, নাশকতার একাধিক মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর ২০১৫ সালের ৭ মে প্রথম দফা বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়।

এরপর রায়ের অনুলিপি সংযুক্ত করে বুলবুল দায়িত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন। পরে সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দাখিল করে। সর্বশেষ গত ৫ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে বুলবুলের বরখাস্ত আদেশ চূড়ান্তভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

২০১৩ সালের ১৫ জুন রাসিক নির্বাচনে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন। এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২১ জুলাই তিনি মেয়র হিসেবে শপথ নেন তিনি। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শপথ নেওয়ার পর মাত্র ১৪ মাস দায়িত্বে ছিলেন বুলবুল। ২০১৮ সালের ১৫ জুন তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে।

সরকার বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের দায়ের করা পুলিশ হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে বুলবুলের নামে। তবে এসব মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছাড়াও রাজশাহী নগর বিএনপির সভাপতি হয়েছেন বুলবুল।