লাগামহীণভাবে চলছে মোবাইল কোম্পানিগুলো !
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-১২ ১২:১৮:৪৩
সাধারণ মানুষ ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিকার চাইলেও কোনো ব্যবস্থা হয় না। অনেক গ্রাহক প্রতারিত হয়ে কার কাছে যাবে তাও বুঝতে পারে না। অরাজকতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে এ নিয়ে আন্দোলনে নামার কথাও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসছে। অনেকের প্রশ্ন- মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ক্ষমতার উত্স কোথায়?
অনেক গ্রাহক তাদের ‘নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া’ কোম্পানি বলেও আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসে তখন তারা সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন চালিয়ে অর্থ লোপাট করে নিয়ে যেত এবং সমাজের মুষ্টিমেয় একটি গোষ্ঠীকে তারা বিশেষ সুবিধা দিত। এখনও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো একইভাবে মানুষের পকেট কেটে টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এখনও কিছু মুষ্টিমেয় লোক ‘নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া’র কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি। এর মধ্যে ৫টি বেসরকারি ও একটি রাষ্ট্রীয়। বেসরকারিগুলো হলো গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল ও সিটিসেল। আর রাষ্ট্রীয় কোম্পানি টেলিটক। এর মধ্যে রবি ও এয়ারটেল সম্প্রতি একীভূত হয়েছে। সিটিসেলের অপারেশন নেই বললেই চলে। ১৯৮৯ সালে সিটিসেল এশিয়ায় প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৭ সালে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণফোন। এরপর আসে অন্য অপারেটরগুলো। এই যাত্রার পর থেকে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিয়তই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে। কোনো নির্দেশনাই তারা মানে না। এ নিয়ে বিটিআরসি থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও জবাব আসে না। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসির চেয়েও উপর মহলে তারা যোগাযোগ রক্ষা করে। তাহলে বিটিআরসির নির্দেশনা কেন মানতে হবে? তারা সরকারকে সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেয়। সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন তাদের উল্টো তোষামোদ করে চলে। ফলে তারা এই ধরনের নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়।
একজন গ্রাহক বলেন, কয়েকদিন আগে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির ধানমন্ডি কাস্টমার সেন্টারে তিনি ফোন করেছিলেন। নেটওয়ার্ক ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ জানান তিনি। জবাবে কাস্টমার সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, এই এলাকায় আমাদের টাওয়ারের যে ধারণক্ষমতা তার চেয়ে অনেক বেশি গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা উপর মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর অরাজকতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেও কঠোরভাবে তাদের মনিটরিং করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে বিটিআরসি গণশুনানির আয়োজন করেছিল। সেখানে অনেক গ্রাহক তাদের ক্ষোভের কথা বলেন। একজন আইনজীবী তো তাদের ব্রিটিশ বেনিয়া আখ্যায়িত করেন। আরেকজন তাদের কাবুলিওয়ালা বলে সম্মোদন করেন। তারা মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই চোখ বন্ধ করে আছে।
মোবাইল কোম্পানিগুলোর টাকা কাটতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে তারা। তার একটি হলো- কল সেন্টারে ফোন করা হলে প্রথম মিনিট ফ্রি। এরপর থেকে দুই টাকা করে মিনিটে কাটে। কিন্তু কেউ কাস্টমার সার্ভিসে ফোন দিলে তাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছতে তার তিন-চার মিনিট লেগে যায়। ততক্ষণে ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোন থেকে ১০/১২ টাকা কেটে নেওয়া হয়ে গেছে। এর কোনো প্রতিকার নেই।গতকাল ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর উপর মানুষ চরম বিরক্ত। তারা প্রতিকার না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সরণাপন্ন হচ্ছেন। যেভাবে গণজাগরণ মঞ্চের তৈরি হয়েছিল, ঠিক সেইভাবেই ফেসবুকে সংগঠিত হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। সব ধর্মের, সব পেশার, সব মতের মানুষ এই একটি জায়গায় একমত হয়েছেন। কারণ তাদের সবার মধ্যেই ক্ষোভ। তাদের মতে, এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এই অরাজকতা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য সরকারিভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো—কীভাবে এটা আলোচনায় এলে সরকার উদ্যোগী হবে সেটাই আলোচনা করে বের করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল কোম্পানিগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশের চিত্র পুরো উল্টো। মোবাইল অপারেটরদের ভাবটা এমন যে, তারা সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ট্যাক্স না পেলে সরকার বাজেট দিতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, যখন মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ছিল না- তখন কি সরকার বাজেট দেয়নি? তখন কি দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলেনি? তাহলে এখন কেন তাদের এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের অতি মাত্রায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বের হওয়া দরকার।