নিজে থেকে সরেননি, এবার বিলুপ্ত হলো সাহারার সংগঠন

প্রকাশ: ২০১৭-০৪-১৫ ১০:৫৪:০৩


Saharaআওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব সাহারা খাতুন পেয়েছিলেন সেই ২০০০ সালে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী ২০০৩ সালেই সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব বাছার কথা ছিল। কিন্তু সেই সম্মেলন হয়নি ১৭ বছরেও। আর নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার কোনো উদ্যোগও ছিল না সংগঠনটির। অবশেষে হস্তক্ষেপ করলো মূল দল। বিলুপ্ত করা হয়েছে কমিটি।

সাহারা খাতুন ২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের নেতৃত্বে থেকে যান। মন্ত্রিত্ব হারালেও সংসদ সদস্য পদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও তিনি।

সাহারা খাতুন ও গত সাত বছর ধরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া আবু আবদুল্লাহকে ঘিরে সরকারপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে অসন্তোষও প্রকাশ্য। আর সংগঠনের মধ্যে কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নানা সময়। সবশেষ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের হারের জন্যও দায়ী করা হচ্ছে এই বিভেদকে।

প্রভাবশালী পেশাজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয়ে কঠোর হলো আওয়ামী লীগ। গত বুধবার রাতে দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা। একই বৈঠকে সরকারপন্থী আইনজীবীদের আরেক সংগঠন বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদকেও বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, পেশাজীবীদের মধ্যে আইনজীবীরাই সবচেয়ে প্রভাব বিস্তার করে। বিভিন্ন দুঃসমেয় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্য পেশাজীবীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি সংগঠন থাকলেও আইনজীবীদের মধ্যে সংগঠন দুটি। এ দুই সংগঠনের নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণেই নির্বাচনে পরাজয় হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইনজীবীদের কোন্দলের বিষয়টি দলের হাইকমান্ডও অবগত আছে। সবশেষ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের পরাজয়ে দলীয় সভাপতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর এ কারণে পেশাজীবীদের এ সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।’

ওই আইনজীবী জানান, ‘এক সংগঠনের সদস্যরা অন্য সংগঠনের সদস্যদের ছাড় দিতে চান না। যে সংগঠন সুযোগ সুবিধা গ্রহণে পিছিয়ে পড়ে তারা নির্বাচনে সেই সুযোগ গ্রহণ করে। দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেন তারা।’

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যে আমাদের কিছু সংগঠন রয়েছে। কিন্তু আইনজীবীদের মধ্যে সংগঠন দুটি। আমরা এখন মনে করি আইনজীবীদের মধ্যে শুধু একটি সংগঠন থাকুন। এ বিবেচনায় দুটি সংগঠনকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেকজন সদস্য বলেন, ‘পেশা এক কিন্তু দলের ব্যানারে দুটি সংগঠন কেন থাকবে? এ দুটি সংগঠনের নেতারা দলের কাজ না করে কোন্দলই বেশি করেন। তাদের কোন্দলের কারণেই আইনজীবীদের আইনজীবীদের নির্বাচনের আমাদের ভরাডুবি হচ্ছে। কারণ নির্বাচনে অন্য এক সংগঠন আরেক সংগঠনের নেতাদের ভোট দিতে চায় না।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আমাদের সহযোগী সংগঠন। আর আগামী ২৯ এপ্রিল এ সংগঠনের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নতুন করে এ তারিখ নির্ধারণ হতে পারে আবার।

জানতে চাইলে সদ্য বিলুপ্ত বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আব্দুল বাসেত মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এখন তিনিই আমাদের নেতৃত্ব ঠিক করে দিবেন।’

আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সংগঠন বিলুপ্তের বিষয়ে আমরা কোন চিঠি পাইনি। তবে সংগঠনের স্বার্থে আমাদের নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মেনে আমরা কাজ করবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী নেতা বলেন, ‘আমি কোন্দলের কথা বলবো না। আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন নির্বাচনে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে। দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেটা বাস্তবায়নে কাজ করেছি। অন্য সংগঠনের কথা আমি বলতে পারবো না।’ তিনি বলেন, ‘দুঃখের কথা হল অন্য সংগঠনের অনেক দলের প্যানেলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন, যাতে আমাদের প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন খসরু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সংগঠন দুটি থাকায় বিভেদ, বিভাজন হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আইনজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচনে। আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্যই এ দুটি সংগঠন বিলুপ্ত করা হয়েছে।’ সূত্র: ঢাকা টাইমস