প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, সিটিং সার্ভিস নামে চলছে পকেট কাটা
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-১৫ ১১:২৬:০২
যাত্রীদের পকেট কাটার সিটিং সার্ভিস বন্ধে ঘোষণা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেনি পরিবহন মালিকরা। মালিকদের ঘোষণা ছিল ১৫ এপ্রিল থেকে সব বাস চলবে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ায়। সিটিং, স্পেশাল বা অন্য কোনো নামে অন্য কোনো অযুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে না। কিন্তু কোনো রুটেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে দেখা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে সড়ক পরিবহন সংস্থা বিআরটিএ। বিকাল তিনটায় এই বৈঠক হবে।
যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্যের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করে পরিবহন মালিকরা। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ এ ঘোষণা দেন ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে কোনো সিটিং সার্ভিস, গেইট লক, বিরতিহীন কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামের কোনো গণপরিবহন থাকবে না।
সব বাস বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুসারে ভাড়া আদায় করবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বন্ধে ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখার কথাও জানান তিনি।
এই ঘোষণা বাস্তাবায়ন হয়নি কেন, জানতে চাইলে খন্দকার এনায়েতউল্লাহ আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে দাবি করেন, ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে তাদের। তিনি বলেন, ‘সিটিং সর্ভিসের অনিয়ম, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও বিভিন্ন অনিয়মের কারনে আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বেধে দেওয়া সময় আজকে থেকে শেষ হচ্ছে। যারা এই সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী কাল থেকেই ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।’
সড়কের পরিস্থিতি
খাজা বাবা পরিবহন নামে একটি বাসে গুলিস্তান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এসেছেন জাকিয়া সুলতানা। এটি চলেছে সিটিং হিসেবেই। ভাড়া নিয়েছে ১০ টাকা।
বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত শতাব্দী পরিবহনে এসেছেন তুহিন। তার কাছেও সিটিং হিসেবে ভাড়া নেয়া হয়েছে ২০ টাকা। এই ভাড়াটা আসলে বনানী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। মগবাজারে তুহিনকে নামিয়ে সেখান থেকে ডেকে যাত্রীও তোলা হয়।
যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর পর্যন্ত চলে শিকড় পরিবহন। তারাও যাত্রী উঠানামা কমে ফার্মগেট থেকেও। কিন্তু গুলিস্তানের পরে যেখানেই যাত্রী নামে, ভাড়া দিতে হয় মিরপুর পর্যন্ত। এই বাসের যাত্রী আবুল হোসেন নেমেছেন বাংলামোটর। তাকেও দিতে হয়েছে ৩০ টাকা।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে গোস্তগোলা পর্যন্ত চলা রাইদা পরিবহনও চলছে সিটিং সার্ভিস হিসেবে। গাজীপুর থেকে চিটাগাং রুটের সাইনবোর্ড পর্যন্ত চলাচলকারী অনাবিল পরিবহনও সিটিং নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চলেছে।
রাইদা পরিবহনের সুপারভাইজার রিপন বলেন, ‘আমাদের সিটিং বাসই লোকাল করছি। যাত্রীরাই বলছে সিটিং করার জন্য। এতে তাড়াতাড়ি অফিস যাওয়া যায়।’
তবে এই পরিবহনের অন্য একটি বাসে মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে থেকে যাত্রী সেজে উঠার চেষ্টার সময় বাধা দেন। শ্রমিকরা। কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমাদের বাস এখনও লোকাল হয়নাই।’
মেজবাহ উদ্দিন নামে এক যাত্রী ফেসবুকে লিখেন, ‘বাংলাদেশ বলে কথা, আইন আছে কিন্ত বাস্তবায়ন নাই। আমি বর্তমানে সিটিং সার্ভিসে গাবতলী থেকে বাড্ডা যাচ্ছি।’
বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলারই কথা না
রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিস বলতে কোনো সার্ভিস নেই। গাড়ির আসন বিবেচনা করে বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। এ হিসেবে কোনো পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কথা নয়। কিন্তু একদিকে বাস কোম্পানিগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে অন্যদিকে সিটিংয়ের নামে বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে। এখন প্রকাশ্যে স্টিকার লাগিয়ে সিটিং সার্ভিস চলছে।
রাজধানীতে চলাচলকারী এসব ‘কাউন্টার সার্ভিস’, ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘কম স্টপেজ’ নামের বাসগুলো সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়াও মানছে না। একই দোষে দুষ্ট খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে থাকা বাসও।
২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ায় সরকার। বাসে ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা। মিনিবাসে এ টাকা ৬০ পয়সা। বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া সাত টাকা ও মিনিবাসে পাঁচ টাকা নির্ধারণ করে বিআরটিএ। প্রায় সব বাসই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। তবে অনিয়ম ঠেকাতে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে মাঠে বিআরটিএ। এতে কিছু জরিমানা দিয়েই পার পান বাসমালিকরা।
খোদ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য নিয়ে নাখোশ। সম্প্রতি রাজধানীর সায়েদাবাদে একটি পরিবহনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যাত্রীসেবায় বিশ্বাস হারানো যাত্রীদের টানতে এখন বিভিন্ন পরিবহন প্রতারণা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি গাড়ির গায়ে লেখা সিটিং সার্ভিস, অথচ ভেতরে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। এটি সিটিং নয় একটা চিটিং সার্ভিস।’