বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ধর্মান্ধ ছিল না: আকবর আলি
প্রকাশ: ২০১৭-০৪-২৩ ১০:৫৭:০৫
বাংলাদেশে মানুষের ধর্ম সবসময় মানবতাবাদী, কখনোই ধর্মান্ধ ছিল না। এ অঞ্চলের গ্রাম-সংগঠন কাঠামো দুর্বল হওয়ার কারণেই এখানে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটেছিল। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে অনুষ্ঠিত এক গণবক্তৃতায় এ কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন রিডিং ক্লাব ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ ‘ডিসকভারি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই বক্তৃতার আয়োজন করে। একই শিরোনামে লিখিত লেখকের পূর্বলিখিত বইকে কেন্দ্র করে আলোচনা আবর্তিত হয়।
আকবর আলি খান বলেন, ‘বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রাতারাতি ইসলামে ধর্মান্তরিত হননি। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীব্যাপী এই প্র্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণ ব্যাখা করে অনেকগুলো তত্ত্ব রয়েছে। কেউ বলেন, মুসলিম শাসকরা বলপ্রয়োগ করে ধর্মান্তর করেছেন। তাহলে দিল্লিতে মুসলমানের সংখ্যা বেশি থাকতো। কেউ বলেছেন, হিন্দু শাসনের অত্যাচারের কারণে বৌদ্ধরা ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বৌদ্ধরা বাংলায় কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। আবার কারও মতে, হিন্দু বর্ণপ্রথার কারণে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বিহার কিংবা দক্ষিণাত্যে এই অত্যাচার আরও বেশি ছিল। এ বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব দিয়েছেন রিচারড ইটন। তার মতে, পীর-মুর্শিদরা এই অঞ্চলে ধর্মান্তরে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। গঙ্গার খাত ভগিরথি থেকে পরিবর্তিত হয়ে পদ্মায় প্রবাহিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে মৃতপ্রায়-বদ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে, ফলে নিম্নবঙ্গের ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে পীররা আবাদ করেছেন এবং এভাবে এখানে গণধর্মান্তরকরণ ঘটেছে।’
ইটনের যুক্তির দুর্বলতা চিহ্নিত করে আকবর আলি খান বলেন, ‘নদীর খাতের পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায় কয়েক শতাব্দী পরে। দুশ বছর আগে ব্রহ্মপুত্র খাত পরিবর্তন করেছে, তাতে তো কোনো মৃতপ্রায় বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া, ম্যানগ্রোভ বন আবাদ করা খুবই কঠিন, ম্যানগ্রোভ অঞ্চল আয়তনেও খুবই ছোট, তা দিয়ে বগুড়ার মুসলমান সংখ্যাধিক্য ব্যাখা করা যায় না।’
ইটনের তত্ত্বের এসব ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসবিদরা এটাকে অনুসরণ করছেন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার এই বইয়ের মাধ্যমে আমি এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছি, আমাদের এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করা দরকার।’
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রিডিং ক্লাবের ইফতিখারুল ইসলাম।