ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু তুষার হত্যার বর্ণনা দিলেন সেতু
প্রকাশ: ২০১৭-০৫-০২ ১৬:১৯:২৬
গত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে জেলার রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রাম থেকে আব্দুল কাফি তুষার (৩) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ তুষার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করে। এরমধ্যে তুষারের মামা সেতু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তুষার হত্যার পুরো বিষয়টি উঠে আসে। কিন্তু শিশু তুষার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাজু।
গত রবিবার ঠাকুরগাঁও জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেষ্ট ফারহানা আক্তার খানের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এই জবানবন্দি দেন সেতু।
অপরদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ শিশু তুষার হত্যায় ৯ জনকে আটক করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহম্মেদ, রানীশংকৈল থানার সার্কেল এসপি মো. হাসিব, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান ও ওসি তদন্ত মান্নান। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
আদালতে দেওয়া সেতুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, মুনিষগাঁও গ্রামের সাজু দীর্ঘদিন যাবত এক কিশোরীর প্রেমে জড়িত। কিছুদিন ধরে ওই প্রেমিকা সাজুকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। এ ছাড়াও অনেক টাকা দেনার মধ্যে ছিলেন সাজু।
তাই মোটা অংকের টাকা কিভাবে পাওয়া যায় সে পরিকল্পনা শুরু করেন সাজু। সেই মোতাবেক প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির চিন্তা করেন তিনি।
কিন্তু সাজুর পক্ষে একা এই অপহরণ করা সম্ভব হবে না বলে পারিবারিক কলহের জেরকে কাজে লাগিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তুষারের মামা সেতু, চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করেন সাজু।
সাজুর পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে অপহরণ করা হয়। সেই অপহরণের বিষয়টি সাজুর বাবা সিরাজুল ইসলাম টের পেয়ে যান। পরে সাজুর বাবা ও তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জমির বিরোধের জেরে শিক্ষা দেওয়ার জন্য চুপ থাকেন। এ সময় সিরাজুল তুষারকে জিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুদিনের মধ্যে তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলেও তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জানায় সিরাজুল।
অপহরণের আগে সেতু তার মায়ের (তুষারের নানি) মোবাইল চুরি করে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করেন এই মুঠোফোন দিয়ে ফোন করেই।
অপহরণের দিন সকালে সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিল তুষার। ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে প্রতিবেশী আব্দুল মজিদের ছেলে শান্তর (১৫) কোলে দেখা যায়। সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়। নিখোঁজের ঘণ্টা ছয়েক পর ওই চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে তুষারের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন সাজু। পরে তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীংশকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিষয়টি টের পেয়ে অপহৃতরা শিশু তুষারকে চেতনা নাশক ওষুধ দিয়ে একটি বস্তায় ভরে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্যস্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে সাজু, সেতু, শান্ত ও রিপন মিলে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করে শিশু তুষারকে।
উল্লেখ্য, ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামে শিশুটির লাশ বাড়ির পাশের একটি খড়ের গাদা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশর সুপার ফারহাত আহম্মেদ জানান, পুলিশ প্রথম থেকে শিশু তুষারকে জীবিত উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু ব্যক্তির তথ্য গোপন করার কারণে তুষারকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। কিন্তু পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে। দ্রুত সাজুকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।