ইনকিলাব সাংবাদিকদের গণচাকুরিচ্যুতিতে ডিআরইউ’র উদ্বেগ ও প্রতিবাদ
প্রকাশ: ২০১৭-০৫-০৬ ১২:৫৪:০১
দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার গণচাকুরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারিদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ না করে ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে ব্যপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যনির্বাহী কমিটি।
ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী স্বাক্ষরিত আজ এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অনতিবিলম্বে দৈনিক ইনকিলাবে গণচাকরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহার, সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
ডিআরইউ’র বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংবাদপত্র পরিচালনের আইন কানুন রয়েছে। ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ ওয়েজ বোর্ডের আওতায় সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনসহ সুযোগ-সুবিধা নেবেন, আর সকলকে কনসুলেটেড বেতন দেবেন, তা কখনই সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। এরকম অনৈতিক কাজ যাতে ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ না করতে পারে সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে ডিআরইউ।
ডিআরইউ’র বিবৃতি তুলে ধরা হলো:
দৈনিক ইনকিলাবে সাংবাদিকদের গণচাকুরিচ্যুতির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র নীতিমালার সকল নিয়মনীতি পরিপন্থী এই গণচাকুরিচ্যুতির তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ যদি অনতিবিলম্বে এই হীন ও বেআইনি কর্মকান্ড থেকে সরে না আসে তাহলে সংগঠণের সদস্যদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করে, বেতন-ভাতা বিষয়ে ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের দেয়া প্রস্তাব শুধু অনৈতিক ও বেআইনিই নয়; এ ধরণের নীতিবিবর্জিত প্রস্তাবনা গণমাধ্যমের জন্য এক অশণি সংকেত। ইনকিলাব সম্পাদক পত্রিকাটিতে কর্মরত সকল সাংবাদিক-কর্মচারির পাওনাদি তার মনগড়া পদ্ধতিতে হিসেব নিকেশ করার পর যে প্রস্তাব দিয়েছে; ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়- আপনাদের পাওনা থেকে ৩০ শতাংশ প্রদান করা হবে। বাকী ৭০ শতাংশের দাবি ছেড়ে দিয়ে আপনাদেরকে ৩০০ টাকার ষ্ট্যাম্পে টিপ-সই দিয়ে অঙ্গিকার করতে হবে যে সমুদয় পাওনা বুঝে পেয়েছেন। যারা এই প্রস্তাবে রাজি হবেন না তাদেরকে চাকুরিচ্যুতি করা হবে। এই ক্যুপ্রস্তাবনায় রাজি না হওয়ায় পত্রিকাটি থেকে গত কয়েকদিনে ডিআরইউ’র ৭জন সদস্যসহ প্রায় শতাধিক সাংবাদিক-কর্মচারিকে বিনা নোটিশে গণচাকুরিচ্যুত করেছে ইনকিলাব কর্র্তৃপক্ষ। যাদের মধ্যে রয়েছেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
যারা ইনকিলাব পত্রিকাটিতে চাকরিতে বহাল রয়েছেন তাদের সঙ্গেও করা হয়েছে চরম প্রতারণা। ২৬ মাসের বকেয়া বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধ না করেই সাংবাদিক-কর্মচারিদের ষ্ট্যাম্পে লেখা ঘৃন্য অঙ্গিকারনামায় টিপসই দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ‘সংবাদপত্র মালিক-সাংবাদিক, শ্রমিক-কর্মচারি সমঝোতা স্মারক’ নামক এই চুক্তিনামায় উল্লেখ রয়েছে, ‘এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পর দৈনিক ইনকিলাব প্রতিষ্ঠাণের সহিত আমার কোনরূপ মালিক শ্রমিক সম্পর্ক থাকিবে না।’ এর মধ্যে দিয়ে ওয়েজবোর্ডের আওতায় চাকরি করা সকল সাংবাদিক-কর্মচারিকে ওয়েজবোর্ডের পরিবর্তে নির্ধারিত (কনসুলেটেড) বেতনে ও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এখানে ডিআরইউর বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার, সংবাদপত্র পরিচালনের আইন কানুন রয়েছে। ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ ওয়েজ বোর্ডের আওতায় সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনসহ সুযোগ-সুবিধা নেবেন, আর সকলকে কনসুলেটেড বেতন দেবেন, তা কখনই সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। এরকম অনৈতিক কাজ যাতে ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ না করতে পারে সে বিষয়ে তথ্য মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে ডিআরইউ।
ডিআরইউ মনে করে, ইনকিলাব কর্তৃপক্ষের এই হীন কর্মকান্ড এখনই রুখে না দিতে পারলে গোটা গণমাধ্যম জুড়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। দেশের প্রচলিত আইনে যে কোন গণমাধ্যমের কর্মীকে ছাঁটাই করার সুযোগ রয়েছে। তবে পূর্বেনোটিশ দিয়ে এবং সর্বশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেটা করতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের সঙ্গে ডিআরইউ লক্ষ্য করছে যে, দৈনিক ইনকিলাব প্রচলিত আইন-কানুন, বিধি-বিধান এমনকি নূন্যতম মানবিক বিবেচনাবোধের তোয়াক্কা না করে গণছাঁটাই করে চলেছে। কোন দায়িত্বশীল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কাছে এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি অনতিবিলম্বে দৈনিক ইনকিলাবে গণচাকরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহার, সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবী জানাচ্ছে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। একইসাথে ইনকিলাবের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ ও অন্যায় কর্মকান্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত পত্রিকাটির সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন যাতে দেশ ত্যাগ না করতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি।
এছাড়াও সম্প্রতি দৈনিক মানবকণ্ঠ ও নিউ নেশন থেকে অনেক সাংবাদিক কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকুরিচ্যুতদের মধ্যে মানবকণ্ঠের ৪জন ও নিউ নেশনের ১জন ডিআরইউ’র সদস্য রয়েছে। ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করে অনতিবিলম্বে তাদের চাকুরিতে পুনর্বাহাল কিংবা সর্বশেষ ওয়জবোর্ড অনুযায়ি তাদের প্রাপ্য সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।