চালের দাম বাড়ছেই

প্রকাশ: ২০১৭-০৫-০৬ ১৬:৫৬:৪৬


Riceরাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে বোরোর নতুন চাল। কিন্তু তারপরও চালের দাম বেড়েই চলেছে। গত বছর আগস্ট থেকে চালের দাম বাড়তে শুরু করেছিল, কিন্তু এবার তা এখনই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারিতে আমন ধানের চাল বাজারে উঠলেও বাজারের অস্থিরতা কমাতে পারেনি। এখন বোরোর চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তারপরও চালের দাম কমছে না।
দিনাজপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলেও চালের দাম বাড়তি। এ মাসের মাঝামাঝি দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে পুরোদমে বোরো ওঠা শুরু হবে। কিন্তু ঐসব অঞ্চলেও চালের দাম চড়া। গত বছর এই সময়ে ঐসব অঞ্চলে নতুন বোরো ধানের মণ ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, যা এবার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় উঠেছে। এদিকে অকাল বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের সবকটি হাওর তলিয়ে সেখানকার অর্ধেকের বেশি বোরো বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাই হাওরাঞ্চল থেকে বোরো সরবরাহ নেই। দেশের অন্যতম প্রধান শস্যভাণ্ডার চলনবিলেও অকাল বন্যা হয়েছে। এসব কারণে চালের দাম সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির জন্য চালের দাম বেড়েছে। আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো সংকট হতে দেব না।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের ( টিসিবি) হিসেবে গতকাল শুক্রবার বাজারে মানভেদে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৬ থেকে ৫০ টাকা ও মোটাজাতের ইরি/স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি। এই দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় নাজিরশাইল/মিনিকেট ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ, পাইজাম/লতা ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ ও মোটা চাল ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি।
চালের দাম বাড়ার পিছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চালকল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী। গত বৃহস্পতিবার তিনি খাদ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠকশেষে সাংবাদিকদের বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে পারে। তবে মিলারদের কাছে চালের কোনো মজুদ নেই। প্রয়োজনে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাতে পারে। রাজধানীর বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি রফিকুল ইসলাম জানান, কেবল মাত্র নতুন চাল ওঠা শুরু হয়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে অকাল বন্যায় প্রায় সবকটি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে মোট চার লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনায় ১ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর ও কিশোরগঞ্জে এক লাখ ৬৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সবমিলিয়ে হাওরবেষ্টিত ৬ জেলায় মোট ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরোর আবাদ হয়েছিল। এরমধ্যে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৭ হেক্টর , নেত্রকোনায় ৭০ হাজার ও কিশোরগঞ্জে  ৫৭ হাজার ২৭ হেক্টর জমির বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। সিলেট বিভাগে মোট ১২ ভাগ বোরো কাটা হয়েছে। বার্ষিক ৯ লক্ষাধিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত সিলেট অঞ্চলে এবার উদ্বৃত্ত দূরের কথা, উত্পাদিত খাদ্য দিয়ে হাওরবাসীর চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এ বিষয়কে পুঁজি করে চালের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে একটি চক্র।
কাওরানবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মো. বেলায়েত বললেন, প্রতি বছর নতুন বোরো ধানের চাল বাজারে উঠলে দাম কমে যায়। কিন্তু এবার তা হয়নি। উল্টো সবধরনের চালের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, মোকামে চালের দাম বেশি।
এদিকে দাম বাড়ায় চাল আমদানিতে সাময়িকভাবে শুল্ক তুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। কারণ চলতি অর্থবছরে চাল আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করায় চাল আমদানি কমে গেছে। ছয় বছর পর সরকার ছয় লাখ টন চাল আমদানির চিন্তাভাবনা করছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, দেশে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির জন্য চালের দাম বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কারসাজি এড়াতে রোজার আগে চালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, হাওরে অকাল বন্যায় ও ব্লাস্ট রোগে এবার ১৫ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছে, যা চালের হিসেবে ১০ থেকে ১২ লাখ টন। তবে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চাল উদ্বৃৃত্ত থাকে। এছাড়া বর্তমানে সরকারের গুদামে সাড়ে ৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। তাই দেশে বছরে প্রায় ৩ কোটি টন চালের চাহিদা মেটাতে কোনো সমস্যা হবে না। সূত্র: ইত্তেফাক