পবিত্র শবে বরাত বৃহস্পতিবার

প্রকাশ: ২০১৭-০৫-১১ ১০:৩৬:১৬


Sabe Baratবছর ঘুরে আবারো বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয়েছে পবিত্র শবে বরাত তথা সৌভাগ্যের রজনী। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিই শবে বরাত। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতই হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ পবিত্র রজনীর মধ্যে শবে বরাত একটি।

শবে বরাত মূলত ফারসি শব্দ। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। শবে বরাত অর্থ সৌভাগ্যের রাত।

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ একে মযাদাপূর্ণ সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে মনে করে। এ রাতে নির্ঘুম থেকে একাগ্রচিত্তে এবাদত বন্দেগি করে, যাতে মহান আল্লাহ ও তার প্রিয় নবীর (সা.) সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

এই মর্যাদাপূর্ণ রাতে মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। আগামী এক বছরের জন্য তিনি বান্দার রিজিক বণ্টন করেন। এই শবে বরাতকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়।

মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত এই রাতে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন, কেউ কেউ দিনে রোজা রাখবেন ও দান-খয়রাত করবেন। বিগত জীবনের পাপ মার্জনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনায় হবে বিশেষ মোনাজাত।

চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী এই পবিত্র রাতে ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করা হবে। এসব খাবার বিতরণ করা হবে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুখীর মধ্যে। সন্ধ্যার পরে অনেকে যাবেন কবরস্থানে। চিরনিদ্রায় শায়িত আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন।

আরবি দিনপঞ্জিকা অনুসারে শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। শবে বরাত মুসলিমদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। তাই শবে বরাতের রাত থেকে আসন্ন রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায়।

শবে বরাতে রাজধানী ঢাকায় আতশবাজি ও পটকাবাজি ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে। আতশবাজি ও নাশকতার মতো অঘটন যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকবে। শবে বরাত উপলক্ষ্যে নেওয়া হবে বাড়তি নিরাপত্তাও। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারাদেশের গুরত্বপূর্ণ মসজিদ, স্থাপনায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ লেখা প্রকাশ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

শবে বরাতের পরের দিন ছুটি হিসেবে গণ্য হয়। এবার শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনেই শবে বরাতের ছুটি পড়েছে। শবে বরাত উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সংবাদপত্রের ছুটি। এ কারণে শুক্রবার সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। তবে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম তথা অনলাইন দৈনিক ও টেলিভিশনের অফিস বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা থাকবে।

যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র শবে বরাত পালনের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কর্মসূচি নিয়েছে। ইসলামী ফাউন্ডেশন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে রাতব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘শবে বরাতের ফজিলত’, ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’, ‘শবে বরাত ও রমজানের তাৎপর্য’, ‘পবিত্র শবে বরাত ও মাহে রজমানের তাৎপর্য’ বিষয়ে আলোচনা। কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত, মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাত। ওয়াজ করবেন মশুরীখোলা আহছানিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মো. মুহিউদ্দিন কাসেম ও তেজগাঁও মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ। ফজরের পর আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে শবে বরাতের কর্মসূচি।

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলিম উম্মার বৃহত্তর ঐক্য, দেশ-জাতির কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন।