বিপাকে সোনিয়া রাহুল
প্রকাশ: ২০১৭-০৫-১৫ ১০:৫৬:৪৯
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা। ১৯৩৮ সালে জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। উর্দুতে কওমি আওয়াজ এবং হিন্দিতে নবজীবন নামে এর আরো দুটি কাগজ ছিল। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর থেকে প্রথম প্রকাশিত এ পত্রিকাটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল) নামের একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংবাদপত্রটির প্রকাশনা চালু ছিল। তবে পত্রিকাটির অব্যবস্থাপনা, দুর্বল সার্কুলেশন এবং রাজস্ব কমতে থাকায় ২০০৮ সালে পত্রিকাটি বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
আর ২০১১-১২ অর্থ বছরে সংস্থাটিকে কিনে নেয় সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের অন্য কয়েক জন শীর্ষ নেতার মালিকানাধীন সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড। তবে বিজেপির সংসদ সদস্য সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতের রাজনীতিতে তৈরি হয় নতুন মোড়। ইতোমধ্যে এ অভিযোগে সোনিয়া গান্ধী এবং তার ছেলে দলের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দিল্লির হাইকোর্ট ইয়ং ইন্ডিয়ানের আবেদন বাতিল করে এ মামলায় আয়কর বিভাগকে তদন্তের অনুমতি দেয়ার ঘটনায় অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি। তাছাড়া কংগ্রেসকে নতুন করে চাঙ্গা করার চেষ্টার মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বেশ বিপাকে পড়েছেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল। কোনটা রেখে কোনটা সামলাবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দ্বারা পরিচালিত ইয়ং ইন্ডিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নামমাত্র ৫০ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। এমনকি এজেএলের কাছে কংগ্রেসের ঋণ হিসেবে পাওনা প্রায় ৯০ কোটি টাকা আদায়েরও অধিকার লাভ করে ইয়ং ইন্ডিয়ান। এ সংস্থাটিতে সোনাি গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তাদের দুজনের পাশাপাশি এ মামলায় মোতিলাল ভোহরা, অস্কার ফার্ন্দান্দেজ, সুমন দুবে এবং স্যাম পিত্রোদাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ন্যাশনাল হেরাল্ড সংক্রান্ত লেনদেনের সব তথ্য আয়কর বিভাগের হাতে তুলে দেয়ার জন্য ইয়ং ইন্ডিয়ানকে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির হাইকোর্ট।
আগেই আয়কর বিভাগের তদন্ত বন্ধ করতে দিল্লির হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইয়ং ইন্ডিয়ান। উল্টো তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আয়কর বিভাগের তদন্তের নির্দেশের পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা চিন্তা করছে সংস্থাটি। ন্যাশনাল হেরাল্ড ইস্যুতে সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। সম্প্রতি দিল্লির হাইকোর্টের নির্দেশের পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় দাবি করা হয়েছে, ইয়ং ইন্ডিয়ান একটি ‘নট ফর প্রফিট’ সংস্থা, অর্থাত্ এই সংস্থা লাভ করার জন্য ব্যবসা করে না।
এই সংস্থা থেকে কেউই বেতন, লভ্যাংশ বা সুবিধাও নেন না। তবে এ কথাটিও সত্য যে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকাটির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন সংবাদপত্র সংস্থাটি অর্থাভাবে ১৯৪০ এবং ১৯৭০ সালে দুই দুইবার প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরী হিসেবে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী এটিকে রক্ষায় সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
এমনকি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পত্রিকাটিকে যে ৯০ কোটি রুপি ঋণ দেয়া হয়েছিল তা পরিশোধের জন্যও কখনো এজেএলকে চাপ দেয়া হয়নি। আর্থিকভাবে ভেঙে পড়া সংস্থাটিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতেই নামমাত্র মূল্যে কিনে নেয় ইয়ং ইন্ডিয়ান নামের অলাভজনক সংস্থাটি। মজার বিষয় হলো— ইয়ং ইন্ডিয়ানে সোনিয়া/রাহুলের পাশাপাশি শেয়ার রয়েছে এজেএলেরও।