জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার
প্রকাশ: ২০১৭-০৫-৩০ ১০:৪৩:৪০
দেশের জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দেশে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। জরিপের তথ্যানুযায়ী দেশে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ৪ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমেছে প্রায় ২২ ভাগ। মাতৃমৃত্যু হারও কমেছে। গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৬ বছর। স্বাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ। তবে এক থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুমৃত্যুর হার গত তিন বছরেও কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রতিহাজারে মৃত্যুহার ৯ জনে স্থির রয়েছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার বাড়েনি পাঁচ বছরেও। তাছাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে মাইগ্রেশন বা স্থানান্তর।
গতকাল সোমবার শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘মনিটরিং দ্যা সিচ্যুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইএমইডি বিভাগের সচিব মফিজুল ইসলাম। প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক ছাড়াও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে জন্ম, মৃত্যু, গড় আয়ু, বিবাহ, তালাক, শিক্ষা, চিকিত্সা, বিদ্যুতের সুবিধা, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সর্বশেষ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সাধারণত আদমশুমারি করা হয় দশ বছর পর পর। এর মধ্যবর্তী সময়ে প্রতিবছর জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও স্থানান্তর সংক্রান্ত তথ্য নমুনা জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হালনাগাদ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে ধর্মভিত্তিক বিভাজনে দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালে মুসলমান জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ, যা ২০১২ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৪ সালে এটি ছিল ৮৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৮৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাকিরা অন্য ধর্মাবলম্বী। সে হিসাবে মুসলমানের সংখ্যা কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। এবার হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টানের আলাদা তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, এটা আদম শুমারি নয়, নমুনা জরিপ। নমুনা এলাকার সংখ্যা পরিবর্তন হওয়ায় কখনও বেড়েছে কখনও কমেছে। সেটি সামগ্রিক চিত্র নয়। সামগ্রিক চিত্র পেতে পরবর্তী আদম শুমারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমীর হোসেন ও আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক। ড. আব্দুল রাজ্জাক বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে মাইগ্রেশনের হার অনেক বেড়েছে। তারা কেন তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যাচ্ছে তার বিবরণ থাকা প্রয়োজন। কেননা বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক কারণের সাথে জলবায়ু পরিবর্তণ জনিত কারণেও মানুষ তাদের স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রজনন হার:প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে দেশের স্থুল জন্মহার ১৮ দশমিক ৭ উল্লেখ করা হয়েছে যা ২০১২ সালের ছিলো ১৮ দশমিক ৯। অর্থাত্ ৫ বছরে দেশের জন্ম হার কমেছে মাত্র ১ শতাংশ।
মরণশীলতা:২০১৬ সালে দেশের প্রতি হাজারে মরণশীলতা ৫ দশমিক ১ যা পল্লী এলাকায় ৫ দশমিক ৭ এবং শহর এলাকায় ৪ দশমিক ২। ২০১২ সালে এই হার ছিলো ৫ দশমিক ৩। শিশুমৃত্যু হার ২০১২ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্মের ক্ষেত্রে ৩৩, এই হার ২০১৬ সালে কমে হয়েছে ২৮। এক থেকে ৪ বছর বয়সি শিশু মৃত্যুর হার ২০১২ সালে ছিলো ২ দশমিক ৩ যা ২০১৬ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৮। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গত পাঁচ বছরে এক থেকে ৪ বছর বয়সি শিশু মৃত্যুর হার শতকরা ২২ ভাগ কমেছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে এসেছে। ২০১২ সালে মাতৃমৃত্যু হার ছিলো ২ দশমিক শুন্য তিন যা ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৮। গত পাঁচ বছরে গড় আয়ুষ্কাল ২ দশমিক ২ বছর বেড়েছে। গড় আয়ু হয়েছে ৭১ দশমিক ৬ বছর। পুরুষের (৭০.৩ বছর) তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু (৭২.৯ বছর) বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বিবাহের গড় বয়স ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ:গত পাঁচ বছরে পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ১ দশমিক ৬ বছর বেড়েছে। ২০১২ সালে পুরুষদের গড় বিবাহের বয়স ছিলো ২৪ দশমিক ৭ বছর যা ২০১৬ সালে হয়েছে ২৬ দশমিক ৩ বছর। গত পাঁচ বছর ধরে নারীদের গড় বিবাহের বয়স ১৯ বছরের কাছাকাছি স্থির রয়েছে। এই পাঁচ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার বাড়েনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী শহর অঞ্চলের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মহিলা এবং গ্রামাঞ্চলের ৫৯ দশমিক ৩ ভাগ মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
সাক্ষরতা, পানি, আলো ও টয়লেট ব্যবহার: প্রতিবেদন অনুযায়ী ৭ বছরের বেশি বয়স্ক জনসংখ্যার ৭১ শতাংশ সাক্ষরতার আওতায় চলে এসেছে, এই হার ২০১২ সালে ছিলো ৫৬ দশমিক ৩ জন। নিরাপদ পানি ব্যবহার করছে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী যা গত পাঁচ বছরে একই অবস্থানে রয়েছে।
প্রতিবন্ধী: প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে দেশের প্রতি হাজারে ৯ জন মানুষ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এটি ১০ থেকে ৮ জন পাওয়া যাচ্ছে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার বেশি। ২০১৬ সালে পুরুষ প্রতিবন্ধীর হার প্রতি হাজারে ৯ দশমিক ৮ এবং মহিলা প্রতিবন্ধীর হার ৮ দশমিক ৩ হয়েছে।
আগমন ও বহির্গমন: প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ২০১২ থেকে ২০১৬ সময়ে অস্বাভাবিক হারে আগমণ ও বহির্গমণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে প্রতি হাজারে ৭৬ দশমিক ৭ জন নিজেদের এলাকার অভ্যন্তরে মাইগ্রেশন বা স্থান পরিবর্তন করেছেন। ২০১২ সালে এই হার ছিলো মাত্র ৪০ দশমিক ২জন। বহির্গমন হারও বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রতি হাজারে ৭৮ দশমিক ৫ জন নিজ অঞ্চল ছেড়ে বাইরে স্থান পরিবর্তন করেছেন। যা ২০১২ সালে ছিলো মাত্র ৪১ দশমিক ৯ জন। শহর এলাকায় আগমনের পরিমাণ প্রতি হাজারে ৯০ থেকে ১২৩ হয়েছে।
এইচআইভি/এইডস:বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৩ সাল থেকে প্রথমবারের মতো এইচআইভি/এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের জ্ঞান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। এতে দেখা গেছে ২০১৬ সালে এসে মাত্র ২৯ দশমিক ১ ভাগ মহিলা এইচআইভি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।