ভাগ্যের জোরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পাকিস্তান
প্রকাশ: ২০১৭-০৬-১৩ ১১:০২:৫৮
অষ্টম উইকেটে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও মোহাম্মদ আমিরের ৯০ বলে অনবদ্য ৭৫ রানের জুটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বারতম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠলো পাকিস্তান। আগামী ১৪ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ চারের লড়াইয়ে নামবে পাকিস্তান। ১৫ জুন অন্য সেমিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত।
‘বি’ গ্রুপ এবং গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৪৯ দশমিক ২ ওভারে ২৩৬ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৩১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে ২৩৭ রান তুলে জয়ের স্বাদ পায় পাকিস্তান।
২৩৭ রানের জয়ের লক্ষ্যে দুর্দান্ত সূচনা করেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আজহার আলী ও ফকর জামান। আজহার ধীর স্থির থাকলেও জামান রান তুলেছেন টি-২০ স্টাইলে। তাই দলীয় ৭৪ রানে জামান যখন ফিরেন, তখন তার নামের পাশে ৩৬ বলে ৫০ রান। জামানের ইনিংসে ছিলো ৮টি চার ও ১টি ছক্কা।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে দলের রানকে সচল রাখার চেষ্টা করেন আজহার ও তিন নম্বরে নামা বাবর আজম। কিন্তু তাদেরকে বড় জুটি গড়তে দেননি শ্রীলঙ্কার পেসার নুয়ান প্রদীপ। জামানকে শিকারের পর ব্যক্তিগত ১০ রানে বাবরকেও শিকার করেন তিনি।
৯২ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর পাকিস্তান ইনিংসে মিনি ধস নামে। ৪৫ রানের ব্যবধানে পরের ৪ উইকেট হারায় তারা। ফলে পাকিস্তানের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ৬ উইকেটে ১৩৭ রান। মোহাম্মদ হাফিজ ১, আজহার ৩৪, ২৫০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা শোয়েব মালিক ১১ ও ইমাদ ওয়াসিম ৪ রান করে আউট হন। হঠাৎ মিনি ধসটা পরবর্তিতে সামাল দেন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও ফাহিম আশরাফ। সপ্তম উইকেটে ২৫ বলে ২৫ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন তারা। ভাগ্য দোষে ১৫ বলে ১৫ রান করা ফাহিম রান আউটের ফাঁদে এই জুটি বিচ্ছিন্ন হয়।
এরপর দলের জয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেন সরফরাজ ও আমির। তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন। দলের জয় নিশ্চিত করেছেন। তবে শেষদিকে যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং করেছে শ্রীলঙ্কা। দলীয় ১৯৪ ও ১৯৮ রানে শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার বলে দু’বার ক্যচ দেন সরফরাজ। কিন্তু ক্যাচ ফেলে ম্যাচে ফেরার সুযোগ হাতছাড়া করেন লঙ্কান ফিল্ডাররা। শুধুমাত্র ক্যাচ নয়, ওভার- থ্রো, মিস ফিল্ডিং করে পাকিস্তানকে জয় উপহার দেন তারা। অষ্টম উইকেটে ৯০ বলে ৭৫ রানের জুটিতে ভাগ্যের সহায়তায় পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচের সেরা সরফরাজ ৫টি চারে ৭৯ বলে অপরাজিত ৬১ ও আমির ৪৩ বলে অপরাজিত ২৮ রান করেন। শ্রীলঙ্কার প্রদীপ ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন।
এর আগে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে প্রথমে ব্যাটিং-এ নেমে ভালো শুরুটা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। দলীয় ১৬ রানে ফিরে যান ওপেনার দানুষ্কা গুনাথিলাকা। পাকিস্তানী পেসার জুনায়েদ খানের শিকার হবার আগে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর বড় জুটির পথেই ছিলেন আরেক ওপেনার নিরোশান ডিকবেলা ও তিন নম্বরে নামা কুশল মেন্ডিস। করেছেনও তাই তবে সেটি গিয়ে থামে দলীয় ৮২ রানে। ২৯ বলে ২৭ রান করা মেন্ডিসকে থামিয়ে ৫৬ রানের জুটি ভাঙ্গেন ডান-হাতি পেসার হাসান আলী।
এক বল পর আবারো সাফল্য পায় পাকিস্তান। চার নম্বরে নামা দিনেশ চান্ডিমালকে শূন্য হাতে থামান অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার ফাহিম আশরাফ। এতে ৩ উইকেটে ৮৩ রানে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে শক্তহাতে দলের হাল ধরেন ডিকবেলা ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। এতে শ্রীলঙ্কার রানের চাকা ঘুঁড়তে থাকে অবলীলায়। ডিকেবলা-ম্যাথুজ বড় সংগ্রহ এনে দেয়ার পথও তৈরি করে ফেলেন। কিন্তু এমন সময় শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনে ধস নামান পাকিস্তানের দুই পেসার মোহাম্মদ আমির ও জুনায়েদ। দু’জনের বোলিং তোপে ৬ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এ সময় ম্যাথুজ ৫৪ বলে ৩৯ ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ- সেঞ্চুরি তুলে ৪টি চারে ৮৬ বলে ৭৩ রান করে আমিরের শিকার হন ডিকবেলা। অন্যপ্রান্ত দিয়ে ধনানঞ্জয়া ডি সিলভা ও থিসারা পেরেরাকে ১ রানের বেশি করতে দেননি জুনায়েদ। ১৬৭ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ২শ’র নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে শ্রীলঙ্কা।
কিন্তু সেটি হতে দেননি আসলে গুণারত্নে ও সুরাঙ্গা লাকমাল। অষ্টম উইকেটে ৫৭ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েন তারা। লাকমল ৩৪ বলে ২৬ রানে ফিরে যাবার পর নবম উইকেটে লাসিথ মালিঙ্গার সাথে ২২ বলে ১৯ রান দলকে এনে দেন গুনারত্নে। ফলে ৪ বল বাকি থাকতেই অলআউট হলে ২৩৬ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা। গুনারত্নে ৪৪ বলে ২৭ রান করেন। পাকিস্তানের দুই পেসার জুনায়েদ ও হাসান ৩টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা : ২৩৬/১০, ৪৯.২ ওভার (ডিকেবলা ৭৩, ম্যাথুজ ৩৯, জুনায়েদ ৩/৪০)।
পাকিস্তান : ২৩৭/৭, ৪৪.৫ ওভার (সরফরাজ ৬১*, জামান ৫০, প্রদীপ ৩/৬০)।
ফল : পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান)।