বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য কমছে
প্রকাশ: ২০১৭-০৬-১৫ ১৪:০২:৩৪
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর জন্য এবার জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থা আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সহায়তা নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ‘কস্ট মডেলিং’ (সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট খরচ বের করার পদ্ধতি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কস্ট মডেলিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) পরামর্শক ও টেলিকম অপারেটরদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিটিআরসিতে গত ৮ জুন থেকে চলছে বিশেষ সভা। এই সভা থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটিতে বিটিআরসি ছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
এরপর গত ১৪ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছিলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে ইন্টারনেটের নতুন মূল্য নির্ধারণ হবে। এজন্য টেলিযোগাযোগ বিভাগ হতে বিটিআরসিকে কস্ট মডেলিং তৈরি করতে বলা হয়। এ জন্য আইটিইউ-এর একজন কর্মকর্তাকে বাংলাদেশে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পরামর্শক খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণে বিটিআরসিকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
২০১৬ সালেও ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে একবার কস্ট মডেলিং করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে ২০০৮ সালে মোবাইল ফোনে কল করার মূল্য নির্ধারণে আইটিইউর পরামর্শক দিয়ে একটি কস্ট মডেলিং করেছিল বিটিআরসি। সেই মডেল অনুসারে প্রতি মিনিট ভয়েস কলের সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
তবে ২০০৮ সালে ভয়েস কলের ক্ষেত্রে কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে দিলেও এবার কস্ট মডেলিংয়ের জন্য চড়া মূল্য রাখবে আইটিইউ। কারণ ২০০৮ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। কিন্তু নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় আইটিইউয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশকে এখন কস্ট মডেলিংয়ের জন্য অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। আইটিইউয়ের পরামর্শক দিয়ে কাজটি করাতে বিটিআরসির প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর বিষয়ে আইটিইউ-এর পরামর্শ এবং সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে শিগগির আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে বিটিআরসির। তবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ দেশে না থাকায় এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তিনি দেশে ফিরলেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩১ লাখ, যা মোট ব্যবহারকারীর ৯৪ শতাংশ। আইএসপি এবং পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহক ৪০ লাখ ৩৬ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট গ্রাহক ৮৯ হাজার।
প্রসঙ্গত, মোবাইল ফোন অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ফ্লেক্সিপ্ল্যানে ৩০ দিন মেয়াদে ১ জিবি ডাটা কিনতে গ্রামীণফোনের গ্রাহকের ব্যয় ২৭৪ টাকা ২৮ পয়সা। একই পরিমাণ ডাটা কিনতে বাংলালিংকের গ্রাহকদের দিতে হচ্ছে ২০৯ টাকা। রবি ও এয়ারটেলের ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ২১৩ টাকা ৬ পয়সা ও ২০৯ টাকা। তবে এক্ষেত্রে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২৮ দিন। আর রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ৩০ দিন মেয়াদি ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মূল্য ১৮০ টাকা।