জলবায়ু ছাড়া অন্যান্য খাতেও পাশে থাকবে ফ্রান্স ও জার্মানি
প্রকাশ: ২০১৫-০৯-২২ ১২:২০:৫৯
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে ফ্রান্স ও জার্মানি। এর পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চায় এ দুই দেশ।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় নির্মাণাধীন বিশ্বের প্রথম ফ্রাংকো-জার্মান দূতাবাস প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিউস ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার এ অঙ্গীকার করেন।
লরাঁ ফাবিউস বলেন, ঢাকায় বিশ্বের প্রথম ফ্রাংকো-জার্মান দূতাবাস তিন দেশের সহযোগিতার ‘নতুন প্রতীক’। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন খাতের সহযোগিতাকে বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশ বাংলাদেশে যৌথ দূতাবাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার তাঁর বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে বলেন, বৈশ্বিক এ ঝুঁকির প্রকোপ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে বাঁচাতে টেকসই সমাধানের জন্য সমস্যার মূলে যেতে হবে।
এক দিনের সফরে ঢাকায় এসে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিউস ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বাসস জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থা দমনে সরকার সতর্ক রয়েছে।
আগামী নভেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে বাংলাদেশ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করছে, তা দেখতে ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল ঢাকায় আসেন। এক দিনের সফরে এসে দূতাবাসের নির্মাণকাজ পরিদর্শনের পাশাপাশি তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জার্মান অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প দেখতে তাঁদের পটুয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সফরটি বাতিল করা হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তাঁদের নিয়ে সাভারের বংশী নদী ও এর পাশে বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ পরিচালিত জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রকল্প ঘুরে দেখেন।
দূতাবাসের অনুষ্ঠান ও ব্রিফিং: সন্ধ্যায় বারিধারায় ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে নির্মাণাধীন দূতাবাস প্রাঙ্গণে তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে দূতাবাসের নির্মাণকাজ ঘুরে দেখেন। এরপর তাঁরা বক্তব্য দেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফাবিউস বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্রান্স ও জার্মানির সহযোগিতা রয়েছে। এ সহযোগিতা বাড়াতে এবং আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে মোকাবিলায় একই জায়গায় দূতাবাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশ কিছু সমস্যা থাকার পরও বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিপুল। বাংলাদেশের জনগণ বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির। ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দুটি বড় দেশ এ দেশে দূতাবাস চালুর মাধ্যমে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ‘আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই।’
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার বলেন, ‘দূতাবাস ভবনটি আমাদের অনন্য বন্ধুতা ও অংশীদারত্বের প্রতীক। যার মাধ্যমে আমরা জানাতে চাই, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো আমরা একসঙ্গে মোকাবিলা করতে চাই।’
ঢাকাকে বিশেষ স্থান হিসেবে উল্লেখ করে স্টেইনমায়ার বলেন, ‘প্যারিসের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন সামনে রেখে জার্মানি নিবিড়ভাবে ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করতে চায়। এ ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই। পটুয়াখালী কিংবা বিশ্বের যেকোনো জায়গার জনগণের জন্য টেকসই সুরক্ষা দিতে চাই না
কেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে আমাদের সমস্যার মূল উপড়ে ফেলতে হবে।’ তাঁর মতে, প্যারিসের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যা নষ্ট করা সমীচীন হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, গত জুনে প্যারিস সফরের সময় তিনি লরাঁ ফাবিউসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। লরাঁ ফাবিউস সেপ্টেম্বরে
ফ্রাংক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারকে বাংলাদেশ সফরের কথা জানান। যৌথ দূতাবাস শুধু অনন্য বললে কম বলা হবে। এটি ‘শান্তি, সহযোগিতা ও সংহতির’ মধ্য দিয়ে একসঙ্গে থাকারও প্রতীক।
ওই অনুষ্ঠানের পর আলাদা ব্রিফিংয়ে লরাঁ ফাবিউস আসন্ন জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে আইনি বাধ্যতামূলক চুক্তি সইয়ের তাগিদ দেন। তাঁর মতে, নিজেদের পার্লামেন্টে অনুসমর্থনসহ কিছু জটিলতার কারণে আইনি বাধ্যতামূলক চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে কোনো কোনো দেশের সমস্যা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থী প্রভাবের সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক রয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অনেক সমস্যা সমাধান করেছি।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ খাতের শ্রমিকদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি খাত যৌথভাবে দেশের ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা পোশাকশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, পোশাক কারখানার মালিকেরাও এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প অন্যান্যের দেশের তুলনায় পোশাক তৈরিতে সর্বোচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের চমৎকার সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, এ দেশের জনগণ আরও উন্নয়নে খুবই সক্রিয় রয়েছে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন।
সফর শেষে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত রাতে প্যারিসের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যাওয়ার কথা আজ সকালে।