ঈদুল ফিতর ও এই দিনের করণীয়
আপডেট: ২০১৭-০৬-২৪ ১৩:১০:৪১
সারা বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব হচ্ছে ঈদুল ফিতর। এ পবিত্র দিনটি অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। ঈদুল ফিতরকে আমরা রোজা ভাঙার আনন্দ উত্সবও বলতে পারি। ঈদের খুশির এক অন্যতম উপকরণ হচ্ছে ঈদের দুই রাকায়াত ওয়াজিব নামাজ। এই ঈদের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মহা নবী মুহাম্মদ (স) বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশ্তারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে চিত্কার করে বলতে থাকেন— হে মুসলিম! নেককাজের ক্ষমতাদাতা ও সাওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহ’র কাছে অতি শিগগির চলো। তোমাদেরকে রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিনে রোজা রাখার নির্দেশ করা হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ।
তোমরা গরিব-দুঃখিকে আহার দান করেছ, আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো। অতঃপর মুসলমানরা যখন ঈদের নামাজ পড়ে তখন একজন ফেরেশ্তা উচ্চ স্বরে ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে তোমাদের প্রভু ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহ ও মন নিয়ে তোমাদের ঘরে ফিরে যাও। এ দিনটি উপহারের দিন। আকাশে এ দিবসের নাম ‘উপহার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে’। হাদিসটি তাবরানী শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঈদ কেবল একটি খুশির বা আনন্দ উদ্যাপনের দিন নয়। ঈদ একটি ইবাদতের নাম। এ দিনটি আমলের জন্য এক বিরাট নেয়ামত। এ দিনেও বিশেষ কিছু ইবাদত বা আমল রয়েছে, যেগুলোতে অনেক পুণ্য লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত জেগে ইবাদত করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। রাতগুলো হলো— জিলহজের রাত, আরাফার রাত, ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত এবং মধ্য শাবানের রাত। সুতরাং ঈদুল ফিতরের রাতে ঈবাদত করা খুবই পুণ্যময় কাজ। এবার আমরা জেনে নেব ঈদের দিন আমাদের কী কী করণীয় রয়েছে। ঈদের দিন ভোর বেলা ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করার মাধ্যমে দিনটি শুরু করা উচিত।
রমণীরা নিজ ঘরে ফজরের নামাজ আদায় করে ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করে পুরুষরা সুগন্ধি ব্যবহার করবেন এবং সবাই সাধ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করবেন। ইবনে উমার (রা) থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন রাসূলুল্লাহ (স) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। বাইহাকী শরীফে বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে হযরত ইবনে উমার (রা) বলেন, নবী করীম (স) দুই ঈদে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টদ্রব্য খাওয়া সুন্নত। ঈদের দিন শুধু আমরা নিজে খাবো না, অন্যকেও পানাহার করাবো। সবাই একসাথে ঈদের আনন্দে শরীক হবো। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। ঈদগাহে এক পথে গিয়ে অন্য পথে ফিরে আসা সুন্নত। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদের সালাম দেওয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা জানানো যায়। ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির পাঠ করা কর্তব্য। সহীহ্ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (স) ঈদুল ফিতরের দিনে ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। তিনি ঈদের নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতে থাকতেন। যখন সালাত শেষ হয়ে যেত তখন আর তাকবির পাঠ করতেন না। তাকবরিটি হলো- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। অলিল্লাহিল হামদ।
অন্যদিকে ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় করা এটি শরীয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। গরিব-মিসকীন রয়েছে তাদেরকে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদকাতুল ফিত্র প্রদান করব। লেখক :আজীমপুর দায়রা শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন পীর ও মুতাওয়াল্লী