বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আশাবাদী যুক্তরাজ্য

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-১৮ ২২:২০:১৯


bnpআগামীতে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য আশাবাদী বলে জানিয়েছেন দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য মার্গারেট এ্যান ম্যাইন।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বিকাল ৫টায় কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।

প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে।

এ্যান ম্যাইন বলেন, ‘মূলত বাংলাদেশে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে আমরা এসেছি। এরই মধ্যে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এটি খুব প্রয়োজনও।’

বৈঠকটি খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে এই ব্রিটেন এমপি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী,বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সবাই তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’

পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আমরা তাদের দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছি। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে যে, তারা আগামীতে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও সবার অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। যেই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার ও মতামত প্রকাশ করতে পারে।’

বৈঠকে কনজারভেটিভ পার্টির ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মার্গারেট এ্যান ম্যাইন।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেয়া ড. আসাদুজ্জামান রিপন যুগান্তরকে বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের বর্বর নির্যাতনে পালিয়ে আসাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি। একইসঙ্গে বিএনপির ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটা খুব উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে আমরা বলেছি, একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই নির্বাচনকালীন আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। এটা শুধু বিএনপির একার কথা নয়, দেশের গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এটাই মনে করেন।’

রিপন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। কারণ, দেশে বর্তমানে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে, তা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত। এর অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষের কোনো মৌলিক অধিকার নেই বললেই চলে। এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে। গত ২৭ আগস্ট ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান নিখোঁজ। এছাড়া বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন চৌধুরীও বেশ কিছুদিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বহু নেতাকর্মীকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় কনজারভেটিভ পার্টির নেতারাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’

বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

রিপন জানান, আমরা বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যা একটি বড় সমস্যা। এই ইস্যুতে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য হতে পারত। সে পথটাও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তিনি তার চিকিৎসা শেষ করেই দেশে ফিরবেন। আমরা উদ্বিগ্ন কারণ, এরই মধ্যে নিম্ন আদালত একটি মামলায় ৫ অক্টোবরের মধ্যে তাকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ যোগ করে বলা হয়েছে যে, নিম্ন আদালত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। বিদেশে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের এমন নির্দেশনা বাস্তবসম্মত নয়। বিরোধী দলের মামলা-হামলার দিকে নজর না দিয়ে সরকারের উচিত রোহিঙ্গাসহ চলমান সমস্যার সমাধানের দিকে নজর দেয়া।’