বিচারপতি সিনহাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: মওদুদ
প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৬ ১৫:০৯:৪২
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘জোর করে’ ছুটি দেওয়ার পর এখন বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ।
বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য ছুটির আবেদনে প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষর নিয়েও নিজের সন্দেহের কথা জানান।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং তার টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মওদুদ।
“এটাকে আমরা বলব যে, তিনি আজকে গৃহবন্দি। তাকে গৃহবন্দি করে এই সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মৃত্যু ঘটিয়েছে, সরকার নিজেই সমাধি রচনা করে দিয়েছেন,” বলেছেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকার ‘চূড়ান্ত গুণ্ডামি’ করছে।
“বন্দুকের নল দিয়ে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে অথবা তিনি ছুটি নেননি। বলা হচ্ছে, ছুটি নেওয়া হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন,উনি (প্রধান বিচারপতি) কোথায় আছেন আমি কিছু জানি না, আমি কিছু বলতে পারব না। আপনি সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা আপনি চিফ জাস্টিসের খবর জানেন না।
“তাহলে কি চিফ জাস্টিস গুম হয়ে গেল? এই গুমের কালচার তো এই অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেবের সরকার এমনভাবে সুন্দরভাবে গুমকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী কেউ এই গুম থেকে রক্ষা পায়নি।”
প্রধান বিচারপতির ছুটি চেয়ে করা আবেদন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার সাংবাদিকদের যে দরখাস্ত দেখিয়েছেন, সেটিকে ভুয়া বলছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মওদুদ আহমদ।
ওই চিঠিতে শারীরিক, ভুগছি, আমি ও আক্রান্ত ভুল বানানে একাধিকবার লেখা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই চিঠির পাঁচটা জায়গায় ভুল- এই ভুল নিয়ে কোনো প্রধান বিচারপতি চিঠিতে সই করতে পারেন না। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। এটা সম্ভব না।”
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ওই চিঠিতে প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এটা তার (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) সই না। উনার সই এটা (আরেকটি সই দেখিয়ে)। যত কাগজ-দলিল সই করেছেন বাংলা ও ইংরেজিতে তাতে এই সই করেছেন।”
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এই আচরণে ভবিষ্যতে বিচারপতিরা নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পারবেন না বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা মওদুদ।
“তার মনে এই ভয় থেকে যাবে যেটা আজকে প্রধান বিচারপতির বেলা হয়েছে। সুতরাং আর তো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই।”
একটা রায় দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টকে এভাবে ‘আক্রমণ করায়’ সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন বলে মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। এক মাস অবকাশের পর সর্বোচ্চ আদালত খোলার দিন প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার খবর নিয়ে আলোচনা চলছে দেশজুড়ে।
ওই আলোচনা সভায় উপস্থিতি আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ও সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা শওকত মাহমুদের জেল খাটা নিয়েও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন মওদুদ আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমি সব সময় বলি, তার (মাহমুদুর রহমান) কথা ভাবলে কেন পাঁচ বছর জেল খাটলেন? কেন রিজভী, মান্না, শওকত মাহমুদ জেল খেটেছেন।
“এরা তো আমাদের দেশের সম্পদ, আমি বলি এরা স্টার বা তারকা,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মওদুদ।
পরে এজন্য ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, “আমি একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম।
“… তবে আমি একথা বলছি, এখন মনে হয় প্রথম ভাষা আন্দোলনে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে আমি কারাগারে গিয়েছিলাম বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তারপর মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এখন মনে হয়, যেসব কাজ করেছি, এগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনো অর্থবহন করে না।”
প্রধান বিচারপতির অবস্থান জানেন না বলায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কঠোর সমালোচনা করেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, “সাতদিন আগেও কল্পনা করতে পেরেছেন যে, রাষ্ট্র গুণ্ডা হয়ে যায়, বিচার বিভাগের উপরে পিস্তল তুলে, সরাসরি প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করায়? আর যে প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন, পিন পিন করে বলেছেন, আমি জানি, উনি ছুটি নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কোথায় আছেন তা জানি না আমরা।
“আপনারা জানেন, রাষ্ট্র জানে, প্রধান আইন কর্মকর্তা জানেন। কী কারণে ক্ষমতায় আছেন তারা? শুধু গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকবার জন্যে? আমি মনে করি, আমাদের রাষ্ট্রের উপরে এখন সিন্দাবাদের দৈত্য চেপে বসেছে। লড়াই করতে হবে সবাইকে।”
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘নগ্ন দলীয়করণ ও বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত অধ্যাপক পিয়াস করীম ও অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমকে ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষক’ হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়।
সংগঠনের সভাপতি সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য দেন।