সিরিজের মধ্যে মুশফিককে নিয়ে কথা বলা পেশাদারি আচরণ নয়
প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৮ ২২:৩৯:৪৩
টেস্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ব্যাটসম্যান হিসেবে তার মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। সর্বশেষ দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং শ্রীলংকা সফরে নিজেদের শততম টেস্ট জয়ের পর তার অধিনায়কত্ব নিয়েও অনেকে প্রশংসা করেছেন।
তবে সম্প্রতি মাঠের কিছু সিদ্ধান্ত এবং সংবাদ সম্মেলনে সেগুলোর জন্য হতাশা প্রকাশ করা নিয়ে বিসিবির একটি অংশের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ছিল মুশফিককে নিয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টে টস জেতার পর ফিল্ডিং নেয়া, মাঠের কিছু সিদ্ধান্ত, বাজে পারফরম্যান্স এবং সেগুলো নিয়ে মিডিয়ায় হতাশা প্রকাশ করায় বিসিবির একটি অংশ মুশফিকের ওপর ক্ষুব্ধ।
টিম ম্যানেজমেন্টসহ বিসিবির একটি অংশ চায় এটাই যেন অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকের শেষ সিরিজ হয়। তবে আরেকটি অংশ সিরিজ চলাকালীন এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি নয়। সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করছেন, একটি সিরিজ চলার মধ্যে একজন অধিনায়কের কোনো ব্যাপার নিয়েই আলোচনা করা ঠিক হচ্ছে না।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেন, ‘এখনই মুশফিককে নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা করা ঠিক নয়। একটা সিরিজ চলছে। এতে তার ওপর চাপ থাকবে, দলের ওপরও তার প্রভাব পড়বে। সিরিজ শেষেই এ বিষয়ে আলোচনা করা ভালো হবে।’ এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচালক বলেন, ‘আমাদের বিসিবির কিছু লোকজন যেভাবে সিরিজের মধ্যে মুশফিককে নিয়ে কথা বলছে সেটা পেশাদারি আচরণ নয়। মুশফিককে অসম্মান করা হচ্ছে।’
এ মুহূর্তে সাবেক ক্রিকেটারের অনেকেই টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুশফিকুরের যোগ্য বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না। যদি অধিনায়কত্ব বদল করতে হয় তাহলে সিনিয়রদের মধ্য থেকে কারও হাতে দায়িত্ব দেয়ার কথা বলছেন সাবেকরা।
সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানও মনে করছেন, আলোচনাটা সিরিজ শেষে হলেই সেটা দলের জন্য ভালো হতো। তবে মুশফিককে অধিনায়কত্ব থেকে সরানো হলে সেটা স্বাভাবিক ঘটনা হবে বলেই মনে করছেন তিনি।
রকিবুল হাসান বলেন, ‘মুশফিক বাংলাদেশের সেরা টেস্ট অধিনায়ক। কিন্তু সবাইকেই একটা সময় সরে যেতে হয়। নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা থেকেই তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। হয়তো অধিনায়ক হিসেবে থাকলেও তার ওপর অনেক চাপ পড়ছে। অধিনায়কত্ব ছাড়লে হয়তো ব্যাটসম্যান হিসেবে সে ভালো করবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি টেস্ট অধিনায়ক পরিবর্তন করে বিসিবি তাহলে সাকিবই হতে পারে মুশফিকের সেরা বিকল্প।’
বিসিবি সর্বশেষ দ্বিস্তরের নির্বাচক কমিটি করতে গিয়ে প্রধান নির্বাচকের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করেছে। পদে থেকেও ক্ষমতা না থাকার কারণে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। মুশফিকের বেলায়ও তেমনটা হচ্ছে। অধিনায়কত্ব আছে কিন্তু মূল সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার ক্ষমতা তার হাতে নেই। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে অস্বস্তিতে ছিলেন মুশফিক।
এ বিষয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই সময়ে কেন মুশফিককে নিয়ে কথা হবে। কিছুটা খারাপ সময় যাচ্ছে। কিছু ভুল সিদ্ধান্তও হয়তো হয়েছে। এই সিরিজটা বাংলাদেশের ভালো যাচ্ছে না তাই বলে ব্যর্থতার সব দায় কী মুশফিককে নিতে হবে? টিম ম্যানেজমেন্টের কি কোনো দায় নেই?’
তিনি বলেন, ‘সিরিজ শেষে অনেক আলোচনার সুযোগ আছে। মুশফিকেরও মিডিয়াতে এভাবে বলা উচিত হয়নি। আর মুশফিক যা বলেছে, সেটা যদি ঠিক হয় তাহলে তো ব্যর্থতার দায় নিতে হবে কোচকেও।’
প্রথম টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার কারণে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টেও টস জিতে সেই ফিল্ডিং নেয়ায় সমালোচনা আরও তীব্র হয়। এছাড়া ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষমতাও নাকি মুশফিকের হাতে ছিল না।
এ নিয়ে টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘কোচরা চেয়েছেন আমি যেন বাইরে (বাউন্ডারির দিকে) ফিল্ডিং করি। কারণ সামনে থাকলে আমার কাছ থেকে নাকি রান হয়ে যায়। আমার হাতে ক্যাচট্যাচ আসলে নাকি ধরার সুযোগ থাকে না। টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা আপনাকে বলবে সেটা তো আপনার করতেই হবে।