পরোয়ানা নিয়েই ফিরলেন খালেদা জিয়া

আপডেট: ২০১৭-১০-১৮ ২৩:৩০:১৯


11বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি।

খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীর ঢল নামে। তাকে একনজর দেখতে রাজধানী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর পুরো রাজপথে সৃষ্টি হয় জনস্রোত। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। গাড়ির ভেতরে তাকে রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়।

খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার পর গাড়িতে চড়ে সরাসরি গুলশানে তার বাসার উদ্দেশে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। রাস্তায় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে গুলশানের বাসায় পৌঁছতে তার আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। রাত ঠিক ৮টায় তিনি বাসায় পৌঁছেন। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দলীয় নেতাকর্মীদের বিদায় জানান। বাসায় পৌঁছার পর সেখানে তার ছোট ভাইয়ের বউ কানিজ ফাতেমা, উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি ভালো আছি দোয়া করো।’

বৃহস্পতিবার জামিনের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এ যাবেন খালেদা জিয়া। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

এদিকে বিমানবন্দরে আসতে নেতাকর্মীদের পদে পদে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করেন। তার ফেরা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা মন্তব্য করলেও সবকিছু মিথ্যা প্রমাণিত করে চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে যথাসময়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানান বিএনপি নেতারা।

এর আগে নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টা ৭ মিনিটে বিমানবন্দরে নামেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিমানবন্দর থেকে ৫টা ২৫ মিনিটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাকে বিদায় জানান। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, দলের ঐক্য বড় বিষয়। দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। মুরব্বিদের সম্মান দিতে হবে। তরুণদের প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্যই সিনিয়রদেরও প্রয়োজন আছে। সিনিয়র নেতাদের বলব, তরুণদের কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন। এখানে যারা ছাত্র আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। রাজনীতি না করলেও দেশে গিয়ে ভোট দেবেন।

হিথরো বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে আসা যুক্তরাজ্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে মিটিং করতে পারিনি। আপ্যায়ন করতে চেয়েছেন, আমি অংশ নিতে পারিনি। আমি এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। মঙ্গলবারও ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। আপনারা যারা প্রবাসে আছেন, তারা দেশে ভোটার হতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটার হতে পারবেন।’

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া আরও বলেন, আল্লাায় বাঁচিয়ে রাখলে, ভবিষ্যতে ইনশাল­াহ আপনাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। মিটিং করব। ভালোভাবে যেন দেশে পৌঁছাতে পারি, দোয়া করবেন। আপনাদের ভাইয়ার (তারেক রহমান) সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, তার খেয়াল রাখবেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম। ভিআইপি লাউঞ্জে সিনিয়র নেতাদের পুলিশ ঢুকতে না দেয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছের সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লঅহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, মীর নাছির, খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, মো. শাজাহান, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, লুৎফর রহমান খান আজাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, সানাউল্লঅহ মিয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাইফুল আলম নীরব, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করিম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, নুরুল ইসলাম নয়ন, মাহবুবুল হাসান পিংকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, হেলাল খান, শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম, শামসুদ্দিন দিদার, মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল­াহ হাসান, সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল বাছিত আঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার প্রমুখ। এছাড়া রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, ঢাকা জেলার সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুরের নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম তাদের সমর্থকদের নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ান। তাদের হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও অভ্যর্থনা জানান।