অনলাইন ব্যাংকিংয়ে বিপর্যয় ঠেকাতে অক্ষম ৮০ শতাংশ ব্যাংক

প্রকাশ: ২০১৭-১১-০৩ ১১:৩৩:০০


bankসাইবার হ্যাকিং, অগ্নিকাণ্ডসহ বহুমুখী ঘটনা ও দুর্ঘটনার কবলে দেশের ব্যাংকিং খাত। এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত এবং দক্ষ জনবল নেই।

দেশের ৮০ শতাংশ ব্যাংকই এসব দুর্ঘটনা মোকাবেলায় অক্ষম। এ ছাড়া ৪০ শতাংশ ব্যাংকের ডাটা সুরক্ষায় ব্যাক-আপ নেই।

৭৫ শতাংশ ব্যাংকের আইটি ম্যানেজমেন্ট সঠিক সেবা দিতে পারবেন কিনা প্রতিদিন তা নিয়ে ভয়ে থাকে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমের মিলনায়তনে ‘ডিজাস্টার রিকভারি ম্যানেজমেন্ট ইন অনলাইন ব্যাংকস : চ্যালেঞ্চ অ্যান্ড রিমেডিয়াল মিজারস’ শীর্ষক কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চেৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এসএম মাঈনুদ্দিন চেৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দেবদুলাল রায় প্রমুখ।

ডেপুটি গভর্নর রাজী হাসান বলেন, দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় ঘটলে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সুরক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থে ব্যাংকগুলোকে সে নীতিমালা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক সিহাব উদ্দীন খানসহ চার সদস্যের গবেষক দল।

দেশের ২৭টি ব্যাংকের ওপর জরিপ চালায় বিআইবিএম। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ২০টি, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটি, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক দুটি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক তিনটি।

গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিং। তবে দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের সময় অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় ১১টি চ্যালেঞ্চ রয়েছে।

যার মধ্যে তথ্যের সঠিক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ রয়েছে ৬০ শতাংশ ব্যাংকে, দক্ষ জনবলের অভাব ৮০ শতাংশ ব্যাংকে, আইটি এবং সাধারণ ব্যাংকিং বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে ৮০ শতাংশ ব্যাংকে, দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায় তহবিলের অভাব রয়েছে ৪৫ শতাংশ ব্যাংকে।

এ ছাড়া অনলাইন মেশিন সরবরাহ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিয়োজিত দক্ষ ও অভিজ্ঞ ভেন্ডরের অভাব রয়েছে ৭০ শতাংশ ব্যাংকে।

কর্মশালায় বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকিং খাতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি (অডিট সিস্টেম) বাড়াতে হবে।

এ ছাড়া আইটি বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি সাধারণ ব্যাংকিং করে এমন কর্মকর্তাদেরও আইটি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চেৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতের আইটি কর্মকর্তাদের ব্যাংক ব্যবসার নিয়মকানুন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

একইভাবে আইটি বিষয়ে শাখা ব্যবস্থাপকদেরও ভালো জানতে হবে। বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ব্যাংকগুলোর আইটি ব্যবস্থাপনা এখনও অনেক দুর্বল।

একটি ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি অফিসার সবদিকে সতর্ক হলেও আইটি বিষয়ে সতর্ক নয়। এ ছাড়া আমাদের দেশে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আইটি বিভাগের দূরত্ব পদ্মা নদীর মতো। এখানে কোনো সেতুবন্ধন নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দেবদুলাল রায় বলেন, আইটি কর্মকর্তাদের ঘটনা এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না।

কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় অন্য বক্তারা বলেন, ব্যাংকের জনশক্তি সম্পর্কিত কোনো গাইডলাইন বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।

এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন করা প্রয়োজন। একটি ব্যাংক চালাতে আসলে কত জনশক্তি প্রয়োজন সেটা গাইডলাইনের মাধ্যমে জানা যাবে।