মুগাবের স্ত্রী পালিয়েছেন!
প্রকাশ: ২০১৭-১১-১৬ ০০:৪৭:৩৯
জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জিম্বাবুয়ে ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (জেডবিসি) সদর দপ্তর দখলে নেওয়ার পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ‘নিরাপদে ও সুস্থ’ আছেন বলে বিবিসি ও রয়টার্সের খবরে বলা হয়।
এদিকে মুগাবের স্ত্রী গ্রেস মুগাবে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে পালিয়েছেন বলে অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, গ্রেস মুগাবে পালিয়ে নামিবিয়া গেছেন। তবে, দেশটির একটি সংবাদপত্রের মালিক টুইটে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী এখন রাজধানী হারারেতেই আছেন।
বিবিসি ও এএফপির খবরে বলা হয়, সামরিক কর্মকর্তারা জিম্বাবুয়ের অভ্যুত্থানের কথা অস্বীকার করেছেন। ১৯৮০ সালের পর থেকে ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন রবার্ট মুগাবে। মুগাবের আশপাশের অপরাধীদের শায়েস্তা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর স্ত্রী নিরাপদে আছেন বলে জানায় সেনাবাহিনী।
প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, মুগাবেকে ‘গৃহবন্দী’ করেছে সেনাবাহিনী। মুগাবে ফোন করে জুমাকে জানিয়েছেন, তিনি ভালো আছেন। তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্টাতিনো চিয়েংগা প্রেসিডেন্ট মুগাবে, তাঁর দল জানু-পিএফ ও মিত্রদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অবস্থান নেন সেনাসদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দখলে নেন। পার্লামেন্টের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজধানী হারারেতে প্রবেশের পথগুলোতে সেনা মোতায়েন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নেয় সেনাবাহিনী। বুধবার ভোরে হারারের উত্তর প্রান্তে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। তবে সেখানে কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়।
কে এই গ্রেস মুগাবে
৯৩ বছর বয়সী মুগাবের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবে। টাইপিস্ট থেকে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী হন তিনি। মুগাবের চেয়ে ৪০ বছরের ছোট গ্রেস ধীরে ধীরে ক্ষমতার প্রায় কেন্দ্রে চলে আসেন। ধারণা করা হচ্ছিল, মুগাবের অনুপস্থিতিতে কিংবা মারা গেলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন গ্রেস মুগাবে।
ঘটনার সূত্রপাত্র যেভাবে
বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মুগাবে গত সপ্তাহে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করেন। এরপর থেকে শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট। এত দিন নানগাগওয়াকে মুগাবের উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু মুগাবে সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বরখাস্ত করা হয় ভাইস প্রেসিডেন্টকে। নানগাগওয়া সেনাবাহিনীর কাছে বেশ জনপ্রিয়। মুগাবের স্থলে তাঁকে বসাতে এই সামরিক পদক্ষেপ বলে অনেকে ধারণা করছেন। সোমবার সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান নানগাগওয়া।
বরখাস্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে গিয়েছিলেন নানগাগওয়া। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গতকাল বুধবার সকালে তিনি দেশে ফিরেছেন বলে জানা গেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে নানগাগওয়াকেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে।
নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে মেজর জেনারেল সিবুসিসো ময়ো বলেছেন, এটা কোনো অভ্যুত্থান নয়। মুগাবে নিরাপদে আছেন। তবে তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তাঁদের উদ্দেশ্য হাসিলের পর দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই সেনা কর্মকর্তা।
মুগাবের বয়স ৯৩ বছর। আশির দশকের শুরুতে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হয় আফ্রিকার এ দেশটি। তখন থেকেই ক্ষমতায় আছেন রবার্ট মুগাবে। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ ছিলেন তিনি।
জিম্বাবুয়েতে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকারের পরিবর্তন হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। সংঘাত এড়িয়ে আলোচনায় বসার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্য ভ্রমণসতর্কতা জারি করেছে।