৯ বছরে ঋণ খেলাপি হয়েছে ৫৭ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা

আপডেট: ২০১৭-১১-২৩ ২২:১৯:৪৯


bad_loanনিয়মনীতি না মেনে ঋণ দেওয়ায় খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থিক খাতে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ৯ বছর পর সেই খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের ৯ বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে সাড়ে তিন গুণ হয়েছে।
এর বাইরে আরও ৪৫ হাজার কোটি টাকার খারাপ ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। লুকিয়ে রাখা এই বিশাল অঙ্ক খেলাপি ঋণের হিসাবের বাইরে রয়েছে। সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ এখন ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংক খাত ঠিক রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যেমন ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া, পর্যবেক্ষক বসানো, পর্ষদ সভার যাবতীয় নথি বিশ্লেষণ, বড় ঋণ অনুমোদন, একক গ্রাহকের ঋণসীমা নির্ধারণ ও ঋণ পুনর্গঠন ব্যবস্থা চালু। এরপরও খাতটিকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে যুক্ত হয়েছে ‘পরিবর্তন আতঙ্ক’। চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে আটটি ব্যাংক। এতে আরও নমনীয় হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি।
সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। জুলাই-সেপ্টেম্বর—এ তিন মাসেই সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার

৫১৭ কোটি টাকা। গত জুনে ছিল ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণই বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা চারটি ঋণ কিছুটা খারাপ হয়ে পড়েছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ এত বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করে যেসব ঋণ নিয়মিত করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছে না। এ ছাড়া আগের অনেক ঋণের পাশাপাশি নতুন করেও বেশ কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
তবে ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজেদের মধ্যে ঋণ আদান-প্রদান করছেন। যে উদ্দেশ্যে এসব ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। ঋণের অর্থ পাচারও হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। ফলে খেলাপি ঋণের ভয়াবহতা প্রকাশ পাচ্ছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেনি। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগের ওপর। ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা বিনিয়োগ হচ্ছে না।
বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। গত জুনে যা ছিল ৩১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এ সময়ে ন্যাশনাল, ফারমার্সসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণই বেড়েছে। তবে এ সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। এ ছাড়া সরকারি বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
দেশে সরকারি-বেসরকারি-বিদেশি মিলে মোট ৫৭টি ব্যাংক রয়েছে। আর্থিক অবস্থার অবনতির তালিকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ১৩ ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল, ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়ালের পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরে খারাপ হচ্ছে।