আগামী বাজেট হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা : মুহিত

প্রকাশ: ২০১৭-১১-২৬ ২৩:৩৭:৩৯


মুহিতআগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রোববার সচিবালয়ে বাজেট প্রস্তাবনা সংক্রান্ত প্রথম বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মুসলিম চৌধুরী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের আগামী বাজেট সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইনের অধীনে একটি একটি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের কমিটি আছে। ওই কমিটির মিটিং ছিল আজ। এছাড়া বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হয় তার একটি কমিটি আছে। সেটারও মিটিং ছিল। আগামী বাজেট হবে সাদামাটা। এটি উচ্চাভিলাসী বাজেট হবে না।

আগামী বাজেটের আকার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা অনুসারে আমি গত ৮-৯ বছরে বাজেটের যে আকার বাড়াতে চেয়েছি তা আগামী বাজেটেও প্রতিফলিত হবে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। এ বছর তো ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ছিল। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ হবে ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী আগামী বছরের বাজেট আমাদের চিন্তা করতে হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকার। এটা প্রাথমিক প্রাক্কলন। পরবর্তী সময়ে এটা ঠিক করা হবে। তবে এর কাছাকাছি কিছুই হবে। এ আকারের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দেরও আমরা একটি প্রাক্কলন করেছি। ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে আমরা সব ঠিক করব। এটা ছিল প্রথম মিটিং।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পারফরম্যান্স ভালো, উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আজকের দ্বিতীয় মিটিং ছিল বিএমআরসির। ওখানে আমরা বাজেট বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের কথা থাকলেও আমরা চার মাসের রিভিউ করেছি। এখানে দেখা গেছে, এবারের পারফরম্যান্স গতবারের থেকে কিছুটা ভালো। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এডিপির ভালো পারফরম্যান্সের জন্য। এডিপি বাস্তবায়ন ভালো হওয়াতেই আমাদের অবস্থা ভালো হয়েছে। গতবার এডিপি বাস্তবায়নের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই এটা অর্থনীতির জন্য খুব ভালো। তার মানে- অর্থনীতি ইজ গ্রোয়িং ওয়েল। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের তো আগামী বছরের জন্য বাজেট করে যেতে হবে। আমরা দায়সারা বাজেট করব না। আমরা তো মনে করছি, আগামী নির্বাচনে আমরাই জিতব। তাই কোনো দায়সারা বাজেট দেব না।

আগামী বাজেট নির্বাচনী বাজেট হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। নির্বাচনী বাজেট কী? নির্বাচনী বাজেট বলে কিছু নেই। আমার কথা হলো, এটা শেষ বাজেট। তাই এখানে ইনোভেটিভ কিছু থাকবে না। যা করছি সেটা কন্টিনিউ করা হবে। আর যেহেতু আমরা আশা করি যে, আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসব, তাই আমরা চাই, যা আমরা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছি, সে ধরনের বাজেটই দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক বাজেটেই আমরা চাই প্রতিবার মন্ত্রণালয়গুলো যে বরাদ্দ পায় তার কম যেন না পায়। অনাহুত কোনো কিছু না হলে আমরা পরিবর্তন করি না। কোনো মন্ত্রণালয়ের যদি অনুদানের প্রয়োজন হয় তাহলে আলাদা কথা। যেমন: আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য স্পেশাল অনুদান দেওয়া হয়, সেটা আলাদা কথা। তাদের বাজেট হয়তো আগামীবার একই থাকবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০১৪ সালেই ঘোষণা দিয়েছি যে, জনশক্তি আর শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি। তবে এতে বরাদ্দ হয়তো খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

রাজস্ব সংগ্রহের পারফরম্যান্স কেমন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো। গত বছর ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এবার আমরা ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি চাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কালেকশন ভালো। আর গুড থিং হচ্ছে, করদাতার সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি যেখানে টার্গেট দিয়েছি ২৫ লাখ, সেটা ৩২ লাখ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের উজ্জ্বল যুবকরা মনে করে, এটা তাদের দায়িত্ব। দেশকে টাকা দেওয়া দরকার। এটা একটা দারুণ খুশির খবর। তাদের বেশিরভাগের বয়স ৪০ এর নিচে। এতে জাতি হিসেবে আমাদের গৌরব বোধ করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপি গ্রোথ আমরা ধরেছি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী জানালেন, এই টার্গেট ছাড়িয়ে যাবে। আমারও তাই মনে হয়। প্রথম প্রান্তিকের পারফরম্যান্স খুব ভালো।

তিনি বলেন, বন্যায় ফসলহানির পরও প্রবৃদ্ধি ভালো হবে। প্রথমবারের মতো আমাদের আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তারপরও ভালো হবে। এক বন্যা এসে সব শেষ করে দিয়ে গেছে। তবুও আমরা গ্রেটফুল। কারণ, গত ১০ বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের কাহিল করেনি। এটা সৌভাগ্যের বিষয়।

রোহিঙ্গা নিয়ে একটি হিসাব কষা হচ্ছে, জানিয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা করছি। কারণ, যারা যাবে (মিয়ানমারে ফেরত যাবে) এটা খুবই কম সংখ্যক হবে। তাদের এখানেই থাকতে হবে। তাই আগামী বাজেটে তাদের জন্য কিছুটা প্রভিশন আমরা দেব। এছাড়া খাতভিত্তিক যেসব ডিমান্ড আসছে আমরা তা দেখছি। স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ নানা খাতে দেওয়া হচ্ছে। তাদের খানা-দানা, রিফিউজি- এগুলো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিষয়। এগুলোর আন্তর্জাতিক রেসপন্সটা খুবই ওয়েলকাম রেসপন্স। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে, সারা বিশ্ব মনে করছে- এটা অন্যায় কাজ হচ্ছে।

অভিযোগ আছে যে, এস আলম গ্রুপ অনেকগুলো ব্যাংক দখল করে নিচ্ছে, এটার ব্যাপারে আপনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের এ কথার জবাবে মন্ত্রী বলেন, উই আর লুকিং এট হিজ ডেট অল অভার দি কান্ট্রি- কী আছে? হি হ্যাজ এ সোর্স অব মানি। আর সোর্স আমার ধারণা মতে, মোস্টলি ডেট ফ্রম আদার ব্যাংকস। সো, আমরা খুব খবর-টবর নিচ্ছি। তারপরে দেখা যাবে কি করা যায়।