কট্টরপন্থীদের চাপে সরে গেলেন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী
প্রকাশ: ২০১৭-১১-২৭ ১২:১০:১৭
ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের চাপের মুখে আজ সোমবার পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ। দেশটির কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল পিটিভির বরাত দিয়ে আজ সোমবার ডন অনলাইনে প্রকাশিত খবরে এ তথ্য জানা যায়।
জাহিদ হামিদ প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর এই পদত্যাগ শিগগিরই অনুমোদন করা হবে বলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে। ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
কট্টরপন্থীদের অবস্থান ধর্মঘটে ১৯ দিন ধরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও অন্যতম শহর রাওয়ালপিন্ডি কার্যত অচল। তাদের সরাতে নিরাপত্তা বাহিনী পদক্ষেপ নিলে গত শনিবার সংঘর্ষ বাধে। এতে ছয়জন নিহত হন। এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাতেই সেনাবাহিনী তলব করা হয়। কাল রোববার পর্যন্ত তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গতকালও বড় বিক্ষোভ করেছে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল। সব মিলিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে ইসলামাবাদ।
ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এবং এর জের ধরে আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভ। ইসলামাবাদে প্রবেশের প্রধান পথ ফাইজাবাদ মহাসড়কে অবস্থান নেন ধর্মীয় দল তেহরিক-ই-লাব্বায়িকের সমর্থকেরা। বছর দুই আগে প্রতিষ্ঠিত প্রায় অপরিচিত এই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও কয়েকটি ধর্মীয় দল।
শনিবার নিরাপত্তা বাহিনী ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হন। আহত হন ২০০ জন। দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এরপরও সরে যাননি ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থকেরা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে অন্য বড় শহর করাচি, লাহোর ও পেশোয়ারে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, সম্প্রতি নির্বাচনী আইন সংশোধনের সময় জনপ্রতিনিধিদের শপথের একটি অংশে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর নাম উল্লেখ না থাকায় ধর্মীয় অবমাননার (ব্লাসফেমি) অভিযোগে আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কট্টরপন্থীরা। যদিও এ ঘটনা একজন ক্লার্কের ভুলে হয়েছে জানিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
খবরে বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শনিবার রাতে ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। রোববার সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সরকারকে সাহায্য করার জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’। তবে তার আগে সুপ্রিম কোর্ট ও ইসলামাবাদ হাইকোর্টের গত সপ্তাহের নির্দেশনার আলোকে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল এবং আইএসআইয়ের মহাপরিচালক নাভিদ মুখতারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, বিক্ষোভকারীদের সরাতে বল প্রয়োগ করা হবে না, বরং রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা হবে। এরই অংশ হিসেবে জাহিদ হামিদকে আইনমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হলো।