বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডের দায় তাহলে কার?

আপডেট: ২০১৭-১২-১৯ ১২:১৭:৫২


1502042264_60বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড আমাদের দেশের রাজনীতিতে প্রচলিত চরম বর্বরতার এক দৃষ্টান্ত। কুপিয়ে কুপিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড দেখে স্তব্ধ হয়েছে গোটা জাতি। তাকে হত্যা করা হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। বিশ্বজিত হত্যাকান্ডের মামলার রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ-বিস্মিত । এটা বিচার না প্রহসন? আগের রায়ে আদালত আট জনকে ফাঁসি দিলো। আর এখন দিলো মাত্র দুই জনকে,চারজনকে খালাসও দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই চারজন জড়িত ছিল না। তাহলে আগের বিচারক কী দেখে রায় দিলেন?’ বিষয়টি সত্যি আমাদের ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। এ কেমন রায়? ন্যায়বিচার পাওয়া দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু বিশ্বজিতের পরিবার কি ন্যায় বিচার পেয়েছেন? যদি না পেয়ে থাকেন, তবে এর জন্য দায়ী কে? বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় আট ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর ফাঁসির রায়ের ওপর আপিলের শুনানি চার বছর ধরে ঝুলে ছিল। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ২১ আসামির মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান বাকি ১৩ জন।

তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো গ্রহণ করা হলোই না, উল্টো বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকের সাজা কমিয়ে দেওয়া হলো। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুজনকে খালাস দেওয়া হলো। মাত্র দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে, চারজনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন। এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন পলাতক। তার মানে এত নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরও কারোরই ফাঁসি হচ্ছে না?

স্বাভাবিক নিয়মে এই হত্যাকাণ্ডের যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা, সেটা দিতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত দেশের উচ্চ আদালতকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে, পুলিশকে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অবশেষে আদালতের নির্দেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। এই মামলাটির ক্ষেত্রে সরকারি চিকিৎসক, আইন কর্মকর্তা, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এক ধরনের দায়িত্বহীন খামখেয়ালী আচরণ করেছেন। আলামত সংগ্রহ, সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির এবং অভিযোগনামা তৈরিতে চরম গাফিলতি লক্ষ করা গেছে।

অভিযুক্তরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকায় এ সংশয় প্রবল ছিল যে, আইনের ফাঁকফোকরে তারা ছাড় পেয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হতে চলেছে। সত্যিই কী আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের সদস্য বলে এমনটা হলো? সাক্ষী-প্রমাণ বানানো বা সাজানোও নয়। সব চোখের দেখা, বাস্তবের মতো। ভিডিও ফুটেজ আছে, ছবিও আছে।তাহলে ‘ন্যায়বিচার’ কোথায় থাকলো? কোথায় থাকলো সাংবিধানিক ঘোষণা: আইনের চোখে সকলে সমান? সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিচারের নামে এই প্রহসনের জবাব দেবেন কি?