কীভাবে এক সন্তানের জন্ম দিলেন তিনজন মিলে?
প্রকাশ: ২০১৮-০১-০৩ ১৩:১৫:২৬
বাবা ও মা মিলিয়ে মোট তিন! অবাক-কাণ্ড! এরকম কখনও শোনা গিয়েছে আগে? কিছুদিনের মধ্যে এটা সত্যি হতে চলেছে। অর্থাৎ এক সন্তানের জন্ম দিলেন তিনজন মিলে। দুই মা ও এক বাবা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিস্কার।
এই পদ্ধতির বিষয়ে কিছু অজানা প্রশ্নের উত্তর….
কেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সায় দিল এই বিশেষ পদ্ধতিতে?
এই পদ্ধতিতে একটি ভ্রূণের মধ্যে মিলে যাবে তিন বাবা-মায়ের জিনগত গুন। ভ্রূণ গঠনের একেবারে প্রথম ধাপেই এটা করা হবে। এতদিন পর্যন্ত যে পদ্ধতি নেওয়া হত তাতে শিশুর বংশগত রোগ থাকার সম্ভাবনা থাকত। পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরী। এদিন পার্লামেন্ট সায় দিল নতুন পদ্ধতিতে কারণ এর ফলে মাইটোকন্ড্রিয়া জনিত সমস্যা থাকলেও তৃতীয় মহিলার শরীর থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া নিজেদের গর্ভে স্থাপন করতে পারবেন। ফলে সন্তান সুস্থ থাকবে।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশনে কি হয়?
মূলত তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু, ব্রিটেনে একটাই পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এই পদ্ধতির নাম PNT। এই পদ্ধতিতে কোনও দম্পতির নিষিক্ত ডিম্বাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে অপর এম মহিলার নিষিক্ত ডিম্বাণুর ক্রোমোজোমে থাকা জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলে ডিম্বাণুর মধ্যে বাবা-মায়ের ক্রোমোজোম থাকে যাতে বাবা-মায়ের ৯৯.৯% জিন থাকে এবং আর এক মহিলা যাঁর মাইটোকন্ড্রিয়া সুস্থ রয়েছে তাঁর ০.০১% ডিএনএ থাকে।
কেন চিকিৎসকরা এই পদ্ধতিতে ভরসা রাখছেন?
মাইটোকন্ড্রিয়া জনিত রোগের কোনও যথাযথ চিকিৎসা হয় না। সাড়ে ছ’হাজার শিশুর মধ্যে একজন এই সমস্যার মারাত্মক শিকার হয়। অসুস্থ মহিলা যদি চান একজন সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে তাহলে তাঁকে খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ওই মহিলার শরীরে অন্য কারও নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু, নতুন এই পদ্ধতি চালু হলে মায়েরা তাঁদের নিজেদের ডিম্বাণু থেকে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। ফলে মায়ের সঙ্গে শিশুর জিনের মিলও থাকবে অথচ মাইটোকন্ড্রিয়া জনিত রোগও থাকবে না। ওই পরিবারের পরবর্তী সব প্রজন্মের জন্য মাইটোকন্ড্রিয়ার সমস্যা নির্মূল হয়ে যাবে।
বিরোধিতা কেন?
কেউ কেউ বিরোধিতা করছেন ধর্মীয় কারণে। আর কেউ কেউ বৈজ্ঞানিক কারণে। এই পদ্ধতিটির সঙ্গে সবাই পরিচিত নয়। তাই এর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে। অনেকের ধারনা অসুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া ওই তৃতীয় মহিলার শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে। এর ফলে কোনও অসুস্থতা আসতে পারে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তাই গবেষণা আরও কিছুটা না এগোলে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই।
বিতর্কের শীর্ষে কারা?
অ্যাংলিকান চার্চ ও রোমান ক্যাথলিক চার্চ এই পদ্ধতির প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন। বহু বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীও এর বিপক্ষে। অনেকেই চাইছেন এই এই পদ্ধতি চালু হোক। আবার অনেকেই ভরসা পাচ্ছেন না।