পৈচাশিকতা বর্ণনা দিলেন রোহিঙ্গারা
প্রকাশ: ২০১৮-০১-২২ ০০:০৬:১১
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হিলি রোববার সকাল ৯টায় কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি হিন্দু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেন ইয়াং হিলি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইয়াং হিলি বালুখালী ১নং অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। বালুখালী আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) গোল ঘরে অপেক্ষমাণ ১৫ জন মৌলভীর সঙ্গে আলাপ করেন জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত।
মৌলভী আবদুল্লাহ ও মোলভী জুবাইরের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের মৌলভীরা ইয়াং হিলিকে মিয়ানমার সেনা নির্যাতনের পৈচাশিকতার বর্ণনা দিয়ে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। মিয়ানমারের উগ্রপন্থী রাখাইন জনগোষ্ঠী ও বর্মি সেনারা যেভাবে গুম, খুন ও নির্যাতন চালাচ্ছে তার চিত্র বিবরণ দেন। আর বর্তমানে কারাগারে আটক রোহিঙ্গা যুবকদেরও মুক্তির দাবি জানান তারা।
রোহিঙ্গারা আশংকা করে জানান, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হলে হিংস্র রাখাইন সম্প্রদায় ও বর্মি সেনা তাদের উপর বিভিন্ন অজুহাতে নির্যাতন চালাতে পারে এ জন্য জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
মৌলভী প্রতিনিধিদলের নেতা বলেন, প্রত্যাবাসনের নামে রোহিঙ্গাদের তাদের নির্মিত ক্যাম্পে নজরবন্দি রেখে শারীরিক,মানসিকসহ বিভিন্ন নির্যাতন চালাতে পারে তাই তাদের নির্মিত ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেবে না। প্রত্যাবাসনের পরপরই রোহিঙ্গাদের যার যার বাড়িঘরে বা বসত ভিটায় ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেয়া হয়নি। পড়ালেখা করতে না পারে মতো মিয়ানমার সরকার সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে দেয়নি। প্রত্যাবাসনের পরপরই স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিতে হবে। যাতে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে।
তাদের ৬ দফা দাবির বর্ণনা শুনার পর ইয়াং হিলি আশ্বস্ত করেন রোহিঙ্গাদের সব ধরনের নিরাপত্তা, সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গাদের সসম্মানে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাসহ যেসব রোহিঙ্গাদের মেরে ফেলা ওই সব পরিবারকে অনুদান হিসেবে অর্থ বরাদ্দের জন্যও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পরে ইয়াং হিলি হানিফ আহাম্মদ (৬০) ফয়েজ আহমদ (৪০) ফয়সাল আহমদ (৩৭) ওমর শরীফসহ (৭৫) চারজন প্রবীণের সঙ্গে কথা বলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি কি না জানতে চান। এসময় তারা বলেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সব ক্ষতিপূরণ দিলে তারা নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে রাজি আছেন।
পরে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের হল রুমে ক্যাম্প রেজাউল করিমের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইয়াং হিলি কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে ক্যাম্প ইনচার্জ বলেন, ক্যাম্পে কোন সমস্যা নেই। তবে বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির ফলে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।