ডিএসইর কৌশলে ‘অবৈধ হস্তক্ষেপে’ টিআইবির উদ্বেগ

প্রকাশ: ২০১৮-০২-১৬ ২১:১৫:৪৫


tibদেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মালিকানায় কৌশলগত বিদেশি অংশীদার বাছাইয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধ চাপ প্রয়োগ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক ডিএসই’র ওপর অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক রিজওয়ান-উল-আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বিএসইসি কর্তৃক এ অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বাছাই প্রক্রিয়ায় শীর্ষস্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা ও অবৈধ চাপ সৃষ্টিকারী দরদাতাকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এছাড়া বিএসইসির এ ধরনের হীন প্রচেষ্টায় জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, শেয়ারবাজারের উন্নতিতে নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডিএসইর উন্নয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতি, কারিগরি দক্ষতা ও উৎকর্ষতা অর্জনে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কৌশলগত বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় বিএসইসির অনৈতিক প্রভাব সৃষ্টির প্রচেষ্টা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। রক্ষক হয়ে বিএসইসি ভক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে না; তাও দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজসে বা প্রভাবান্বিত হয়ে।

তিনি বলেন, দর প্রস্তাব মূল্যায়নে প্রায় অর্ধেক পিছিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের তদবির ও চাপ প্রয়োগ যেমন নজিরবিহীন ও আইনবিরুদ্ধ, বিএসইসি কর্তৃক তাতে প্রভাবিত হয়ে বাছাই প্রক্রিয়াকে কলুষিত করে অযোগ্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে ইন্ধন জোগানো তেমনই বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিমিউচুয়ালাইজেশন উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার বাছাই প্রক্রিয়ায় দর প্রস্তাবের নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতার ভিত্তিতে নির্বাচিত সর্বোচ্চ দরদাতা, সবচেয়ে যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছেই শেয়ার বিক্রি করা হবে, যা স্বাভাবিক, প্রথাগত ও আইনসিদ্ধ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় উপযুক্ত কারণ ছাড়া সর্বোচ্চ দরদাতাকে বাছাই না করে দ্বিতীয় দরদাতাকে বাছাই করলে তা হবে আইনের ব্যত্যয়। যা পুরো প্রক্রিয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আইন অনুযায়ী ডিএসইর জন্য শুভ ও লাভজনক হবে- এমন সর্বোচ্চ দরদাতা, যোগ্য ও সুখ্যাতিসম্পন্ন কৌশলগত মালিকানার বিদেশি অংশীদার নির্বাচনে ডিএসইকে আইন অনুযায়ী চলতে দেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির দিকে সরকারেরও সচেষ্ট হওয়া উচিৎ বলে মনে করে টিআইবি।

সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দর যাচাই শেষে আইনানুযায়ী ডিএসই বোর্ড কর্তৃক বাছাইকৃত বিজয়ী পক্ষকে নির্বাচিত করে অনুমোদনের চিঠি বিএসইসিকে না পাঠানোর মৌখিক নির্দেশনায় ডিএসইর শেয়ারধারীসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। টিআইবি মনে করে, এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক আচরণ ও ধসের ধারাবাহিকতা রোধে নেয়া উদ্যোগ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। বাজার কারসাজি, যোগসাজশ ও কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে যে গোষ্ঠী বারবার বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করেছে, সে চক্র এ ধরনের অশুভ পাঁয়তারায় লিপ্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

এছাড়া পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে যেন কোনো প্রকার চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে না হয় ও ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সৎসাহস থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে টিআইবি।