দীপনকে ভারী অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল : ময়নাতদন্ত রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০১৫-১১-০১ ১১:৫১:০৭
দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপনের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এখন তাকে গোসল করানো হচ্ছে। এরপর তাকে কবি সুফিয়া কামাল হলে শিক্ষকদের আবাসিক বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে।
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ড. কাজী মো. আবু সামাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘১০টা ৫ মিনিটে দীপনের ময়না তদন্ত শুরু হয়, ৩৫ মিনিট সময় লেগেছে। আমরা তার ঘাড়ে ৩টি গুরুতর জখম পেয়েছি। এরমধ্যে তার ঘাড়ের জখমটি ৪ ইঞ্চি গভীর ছিল। হাড়সহ কেটে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে কোনো ভারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, এছাড়া তার শরীরে আরো তিনটি আঘাতের চিহ্ন আছে। সেগুলোও কোপানোর চিহ্ন, কিন্তু মাংস কাটেনি। তবে মাংস থেতলে গেছে। বিগত সময়ের খুনগুলোর সঙ্গে এ খুনের বেশ রয়েছে। দীপনকে মাটিতে শুইয়ে উপর্যুপরি কোপানো হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসের ভেতরে প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি জঙ্গিদের হামলায় নিহত মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ছিলেন।
সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে দীপনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে নেয়া অপারেশন থিয়েটারে। সেখানেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। ছেলে হত্যার বিষয়ে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল কাশেম ফজলুল হক জানান, শুদ্ধস্বরের প্রকাশক দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই দীপনের স্ত্রী তাকে জানান- তিনি অনেকবার ফোন করেও দীপনকে পাননি। পরে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসানকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
নাজমুল হোসেনও অনেকবার ফোন করে দীপনকে না পেয়ে তার দোকানে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, দোকানের ভেতর থেকে রক্ত গড়িয়ে আসছে। এরপরই তিনি দীপনের স্ত্রী, বাবা ও পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তারপরই পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমার ধারণা ‘শুদ্ধস্বর’র স্বত্ত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলকে হামলাকারীরাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আইনানুযায়ী হয়তোবা মামলা করবো। তবে বিচার নিয়ে আশা করি না। কেননা আমি জানি এসবের বিচার হবে না।’
এর হত্যার পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠী বা অন্য কারো সম্পৃক্ততা আছে মনে করছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এর পিছনে কাদের এখন সম্পৃক্ততা আছে তা বলতে পারছি না। তবে এইটুকু বলবো আমার ছেলে প্রকৃতিপন্থি ছিল, ধর্মবিরোধী ছিল না।’
লিটলম্যাগের কাজ করতে করতে একটা সময় বইয়ের প্রতি ভালবাসা ও মমতাবোধের তৈরি হয় দীপনের। সেখান থেকেই প্রকাশন সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিষয়ভিত্তিক, সৃজনশীল, মননশীল বই বেশি প্রকাশ করা হতো তার প্রকাশনা থেকে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস