প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেয়া উচিত : রাষ্ট্রপতি
প্রকাশ: ২০১৮-০৩-০৬ ২১:২৩:৫০
প্রশ্নফাঁসকারীদের ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেয়া উচিত বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে প্রশ্নফাঁস। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেশের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত, দেশ ও জাতির স্বার্থে দে শুড গো টু ফায়ারিং স্কোয়াড। ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত।
মঙ্গলবার রাজধানীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। শিক্ষাপদকের জন্য মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে অনুষ্ঠানে পদক বিতরণ করেন রাষ্ট্রপতি ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে এতে মন্ত্রণালয়েরে সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন বক্তব্য দেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসে কোচিং সেন্টারের প্রতি ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, যেসব শিক্ষক ছেলে-মেয়েদের শিখাইব, তারা পড়াইবার মার্কেট ভালা করার জন্য যদি প্রশ্ন কইয়া দেয়- ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’… মার্কেট (কোচিংয়ের) ভালা হবে, বেশি বেশি (শিক্ষার্থী) পড়তে আইব, এসব চিন্তা থেকে তারা এইগুলি (প্রশ্নফাঁস) করতেছে।
শক্ত ভিত্তির শিক্ষাজীবন শুরু হলে প্রশ্নফাঁস শেষ হয়ে আসবে
শিক্ষকদের উদ্যোগী ও নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি বলেন, সমাজের কোন কাজটি ভালো এবং কোন কাজটি মন্দ, কোন কাজটি করলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটবে- সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার পাশাপাশি শিশুদের ভালো কাজের চর্চা করাতে পারেন আপনারাই। তাদের মাঝে দেশাত্ববোধ সৃষ্টি করে দেশপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার মূলভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর তা করতে পারলেই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শেষ হয়ে আসবে।
বাপ-মা সন্তানকে কী শিখাইতাছে?
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ বলেন, এখন সব বাবা-মা চায় তার সন্তান গোল্ডেন এ প্লাস পাক, ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মা ছেলে-মেয়েকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব। এর চেয়ে লজ্জাজনক, জঘন্য কাজ আর কী হতে পারে। এই বাপ-মা তার সন্তানকে কী শিখাইতাছে? তারে কী বানাইতে চাইতাছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া দেশের কী হবে?
শিশুরা জাতির ভবিষ্যত, তাই অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ, জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। পড়াশোনা ও বইয়ের ভারে জর্জরিত না করে তাদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের পর্যাপ্ত সময় দিন। আমরা যে আনন্দঘন শৈশব পেয়েছি, তাদেরকেও তার ধাদ দিতে হবে। আমাদের বাপ-মা খবরই নিছে না
নিজের শিক্ষাজীবনের সময়ের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিছে না। স্কুলে গেছে নি? অহনতো পাছার মইধ্যে লাইগা থাকে। লাইগা থাকে ভালা কথা, অসুবিধা নাই। ভালা জিনিস শিখাক। ফার্স্ট-সেকেন্ড হইলে কী হয়? আমিতো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মতো খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী?
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমার মনে হয় এখন যে টিক মার্ক (এমসিকিউ) দিয়া দেয়। ইট শুড বি স্টপড। এমন সিস্টম করা দরকার প্রশ্ন আগেই চলে আসবে। এই প্রশ্ন আইব, এখন তুমি লেখ। মিনিস্ট্রি থেকে বইলা দেন- এই প্রশ্ন আইব। সব কোর্স-সিলেবাস মিলাইয়া ২০-২৫টা প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্ন ওয়েবসাইটে দিয়া দেন। ২৫টা প্রশ্ন থাকলে পুরো সিলেবাস কাভার করবে। কিন্তু কুনডা আইবো হেইডা কইতে পারত না… এই সিস্টেম যদি হয়, তাহলে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না।