ঈদের আগে মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা

প্রকাশ: ২০১৮-০৬-০২ ০৬:১২:১৯


khaleda-ziaকুমিল্লার দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আপিল বিভাগে স্থগিত হওয়ায় ঈদের আগে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় এখন রাজপথের মাধ্যমেই সমাধান করতে চায় বিএনপি। এজন্য দলের সিনিয়র নেতারা শুক্রবার গুলশানে বৈঠক করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে দলের নেতারা এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেন হাইকোর্ট। কিন্তু পরবর্তীতে আপিল বিভাগে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দলের সিনিয়র আইনজীবীরাও তার মুক্তির আশা দেখছেন না। এজন্য বৈঠকে উপস্থিত সব নেতাই রাজপথের আন্দোলন বেগবান করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ঈদের পরেই সেজন্য কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পক্ষে তারা।

শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিবও কঠোর আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে রাস্তায় নামার। সময় এসেছে রুখে দাঁড়াবার, প্রতিহত করার।

শুক্রবার নয়াপল্টন ভাসানী ভবনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে রচিত ‘রণধ্বনি’ গানের সিডি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি আলোচনা করুন, নির্বাচন নিয়ে কথা বলুন। কিন্তু তারা কথায় কথায় বলে সংবিধান অনুযায়ী সব কিছু হবে। আরে সংবিধান তো আপনারা কেটেকুটে শেষ করে ফেলেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মাসের পর মাস দেশনেত্রীকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে। জানি না এ কথা বললে আদালত অবমাননা হবে কিনা। তবে অবমাননা হলেও করার কিছু নেই। কারণ আমাদের এখন আর হারানোর কিছু নেই। হাইকোর্ট বেইল দিয়েছে। এরপরও নানা কৌশলে মাসের পর মাস তাকে (খালেদা জিয়াকে) আটক রেখেছে। উচ্চতর আদালত ছুটির কথা বলে বিচার প্রলম্বিত করছে।’

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও একই সুরে বক্তব্য দিয়েছেন। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথই সমাধান। আইনি লড়াই আমরা চালিয়ে যাবো ঠিকই। কিন্তু তাতে তার মুক্তি আসবে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’

মওদুদ আরও বলেন, ‘আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করছি। কিন্তু পেরে উঠছি না। কারণ নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীনে। বিচারকরা সম্পূর্ণভাবে সরকারের ইচ্ছামতো কাজ করছেন। খালেদা জিয়ার জামিন, আদালতে আনবে কি আনবে না সব কিছু নির্ভর করছে নিম্ন আদালতের ওপর। তবে আমি এখনও বিশ্বাস করি খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। কিন্তু বিলম্বিত হবে। সরকার ইচ্ছা করে বিলম্বিত করবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এই সরকারের নির্দেশেই আজকে খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আমরা মনে করি- এটা কারো নির্দেশে নয়, একমাত্র সরকার প্রধান- যারই নির্দেশে সবকিছু হচ্ছে। যতদিন পারা যায় তাকে কষ্ট দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু জোসেফ নয়, আরও অনেককেই এভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জোসেফকে মুক্তি দিয়ে গোপনে বিদেশে পার করে দেওয়া হয়েছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার?’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দেশনেত্রী (খালেদা জিয়ার) উপরে সরকার যে অত্যাচার করছে তা ইতোপূর্বে কারো ওপর করা হয়নি। এই অবস্থায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এজন্য কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে।