দুই মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১৭৬ : আসক

প্রকাশ: ২০১৮-০৬-৩০ ২১:৫৫:৫৮


aos-2018চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে/গুলি/ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধে ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ৪ মে থেকে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করেই নিহত হয়েছেন ১৭৬ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তৈরি করা হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

আসকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন এই ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪২৭ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন চারজন। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ৫৭ নারীর ওপর।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু
আসক বলছে, ৪ মে র্যাব দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে। আর ১৫ মে মাদক নির্মূলে হার্ডলইনে যায়। এই অভিযানে ১৫ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৭৬ জনের। র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ ৬৬ জন, পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ১৪১ জন, ডিবি পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ৩১ জন, নৌ-পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ ১ জন, পুলিশের নির্যাতনে ৩ জন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে ২ জন, পুলিশের গুলিতে ৩ জন, ডিবি পুলিশের গুলিতে ৩ জন। থানাহাজতে অ্যাত্মহত্যা করেছে ১ জন, গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার ১৮ জন, এছাড়া পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে ৫ জন, র্যাবের হেফাজতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কারা হেফাজতে মৃত্যু
চলতি বছরের ছয় মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫০ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২২ জন এবং হাজতি ২৮ জন।

রাজনৈতিক সংঘাত
গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৪৫টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন এবং আহত হয়েছেন ১৯৯৮ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এছাড়া আওয়ামী লীগ-যুবলীগ, ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ, বিএনপি-বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল-স্বেচ্ছাসেবক দল, এবং যুবদল-যুবদল সংঘাতে একজন করে মারা গেছেন।

যৌন হয়রানি ও সহিংসতা
গত ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৮ জন নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৬৯ জন নারী-পুরুষ।

ধর্ষণ ও হত্যা
ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৪২৭ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ নারীকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন নারী। ধর্ষণের চেষ্টার পর আত্মহত্যা করেছেন ১ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ৫৭ নারীর ওপর।

পারিবারিক নির্যাতন
পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০৪ নারী। এর মধ্যে ১৪৪ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩০ নারী। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০ নারী।

যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন
যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১১২ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫২ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৪৪ জনকে, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন নারী।

গৃহকর্মী নির্যাতন
মোট ২৫ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

এসিড নিক্ষেপ
গত ছয় মাসে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১৪ জন নারী।

সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতন
সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ জন নারী।

শিশু নির্যাতন ও হত্যা
দেশের বিভিন্নস্থানে শিশুদের হত্যা এবং নির্যাতনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। গত ছয় মাসে ৮৫৬ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৮ শিশুকে হত্যা, ৫৮ শিশুর আত্মহত্যা, নিখোঁজের পর ৮ জন শিশু এবং বিভিন্ন সময়ে ৫৩ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা
গর্ভপাতের সময় মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এছাড়া রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৫ শিশুর।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন
হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬টি বাসস্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ২৮টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৪ জন। এছাড়া পাবনায় চাটমোহরে ঘরে ঢুকে একজন পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে।

সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি
গত ছয় মাসে ৯০ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

সীমান্তে সংঘাত
সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে ৩ জন নিহত, আহত হয়েছেন ৯ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৮ জন। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানা এলাকায় ৯ম শ্রেণির স্কুলছাত্র রাসেল বিএসএফের গুলিতে চোখ হারিয়েছেন।

গণপিটুনি
গত ছয় মাসে গণপিটুনির ঘটনায় মারা গেছেন ২৪ জন।

আসক বলছে, প্রতিটি ব্যক্তির বেঁচে থাকার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এটি তার সাংবিধানিক অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিলসমূহেও এ অধিকার স্বীকৃত, রাষ্ট্র তার কাছ থেকে এ অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। যেকোনো ধরনের সামাজিক ব্যাধি বা অপরাধ নির্মূলের জন্য রাষ্ট্র অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু তা হতে হবে যথোপযুক্ত সামাজিক ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী নয়, আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই কেবল ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করতে হবে এবং বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করতে হবে।