শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়তে কাজ করছে সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-০৭-২৬ ১০:১২:৫৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে স্বীকৃতি পেয়েছে; তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৭’ বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৩ জনকে স্বর্ণপদক দেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস, ইউএনবি ও বিডিনিউজের।
স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব, পিছিয়ে যাব না। ভবিষ্যতেও যেন পিছিয়ে না থাকি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা কারও কাছে হাত পেতে চলব না।’
দেশের উন্নয়নে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশের যতটুকু অগ্রগতি হয়েছিল, ২০০১ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী, আজকে যতটুকুই অর্জন, দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি; অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস করে। বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক ও ১০৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৯টি।
তিনি বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসারে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৬টি এবং ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম দেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করে। সম্প্রতি রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটে আরও একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদকজয়ী মেধাবীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে তোমরা যথাযথ ও সঠিক নেতৃত্ব দেবে। তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও কর্মের ফলে দেশের উন্নয়নে অধিক গতি সঞ্চারিত হবে। তোমরাই আগামীতে দেশের কর্ণধার হবে।’
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ১৬৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৬২ জন ছেলে শিক্ষার্থী হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় আমাদের দেশে মেয়েরা সত্যিই অবহেলিত ছিল। বাবা-মা, অভিভাবক মনে করতেন মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে কী হবে, দু’দিন পরে বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের খরচ আছে। লেখাপড়া শিখে তো পরের ঘরেই চলে যাবে। এই মানসিকতার যে পরিবর্তন হয়েছে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
প্রধানমন্ত্রী তার নেতৃত্বে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, কেউ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামের মানুষ পাবে, প্রতিটি অঞ্চল উন্নত হবে- সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলব। সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান প্রিয়া এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সজন ধর স্বর্ণপদকপ্রাপ্তদের পক্ষে অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হিসেবে অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং ড. সৌমিত্র শেখর তাদের রচিত ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ শীর্ষক গ্রন্থটিও প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জার্মানির রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন জার্মানির রাষ্ট্রদূত টমাস হেইনরিখ প্রিঞ্জ।
জার্মানির রাষ্ট্রদূত গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন বছর অবস্থানকালে প্রিঞ্জের কাজের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে সরকারের সহযোগিতার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান প্রিঞ্জ। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষের হাতে মোবাইল ফোন দেখে তিনি খুবই মুগ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।