বিভৎস জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ সীমাহীন : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-০৭-২৭ ১৩:১৩:০১
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিভৎস জলাবদ্ধতায় দেশের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট বেহাল, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিভৎস জলাবদ্ধতায় মানুষ, গরু-ছাগল, বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবহন অর্ধেকের বেশি ডুবে থাকে। জলজট ও যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগ সীমাহীন।
তিনি বলেন, সারা দেশে প্রায় ৮৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তাঘাট বেহাল। হাটবাজারের অবস্থাও বেহাল, সেখানে কোনো উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, গ্রামীণ সড়ক গ্রামীণ অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় কর্মসংস্থান কমে গেছে। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে ভয়াবহ আকারে।
কোরবানির ঈদ প্রাক্কালে পশুর হাট, মানুষের যাতায়াতব্যবস্থা যে কী দুর্বিষহ হয়ে পড়বে তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে দেশের মানুষ ক্লান্ত-শ্রান্ত। আওয়ামী লীগ সবসময়ই মিথ্যা উন্নয়নের গলাবাজি করে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন নেতাদের মুখে উন্নয়নের কথা শুনলেই মানুষের হাসি পায়। এত মেগাপ্রজেক্টের আওয়াজ কীসের জন্য তা জনগণের বুঝতে বাকি নেই। এসব প্রজেক্ট থাকলেই সেকেন্ড হোম ও বেগমপল্লী বানানো যায়।
‘অথচ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংস হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টিতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন শহর তলিয়ে যায়,’ যোগ করেন রিজভী।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, কয়েক বছর ধরে লোপাট হয়ে গেল লাখ লাখ টন কয়লা, অথচ খনি কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। কারণ খনি কর্তৃপক্ষই ‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল’।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বিপুল পরিমাণ কয়লা লোপাট হওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদাসীন থাকাটাও রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
দুদকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে এত বিশাল পরিমাণ কয়লা লুটপাটের পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। ‘যেন রোগী মরিবার পর ডাক্তার আসিলেন’।
‘আসলে দুদক তো সরকারের দুর্নীতি ধোয়ার মেশিন। আর বিরোধী দলের জন্য দুদক টর্চারিং মেশিন। দুদকের তদন্ত আইওয়াশ মাত্র।’
রিজভী বলেন, খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকার ঘোষণা, কয়লা সরবরাহ বন্ধ, গত বছর জুলাইয়ে বিদ্যুৎকেন্দের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার পরও মন্ত্রণালয়ের হুশ হল না কেন, তাতেই প্রমাণিত হয়-ক্ষমতাসীন মহলের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া লাখ লাখ টন কয়লা অদৃশ্য হয়ে যায়নি।
ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী শাসনামলে এত বিপুল পরিমাণ কয়লা চুরিতে কেউ বিস্মিত নয়। কারণ মেগা চুরির ঘটনা কেবল তাদের আমলেই ঘটে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন-এখন পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়।
রিজভী আরও বলেন, দুর্নীতি-দুঃশাসনের সংস্কৃতি আওয়ামী লীগেরই। মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে অসাধু ব্যবসায়ী ও খনি সিন্ডিকেটই জাতীয় সম্পদ কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে না লাগিয়ে কালোবাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, কয়লা লোপাটের সঙ্গে খনি দুর্নীতির তদন্তে নাম আসা প্রকল্পের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিদেশ যেতে ৪২ দিনের ছুটি দেয়া হয়েছে। তাই এই কয়লা লোপাটের মহাদুর্নীতির দায় সরকার বা সরকারপ্রধান এড়িয়ে যেতে পারেন না।
রিজভী বলেন, তথ্যমন্ত্রী তথ্য দিয়েছেন যে, পিয়নের চাকরি নিতে গেলেই নাকি ১০ লাখ টাকা লাগে। এই ১০ লাখ টাকার ভাগ কে কে পায় সেটিও তথ্যমন্ত্রী জানালে ভালো করতেন।