আমি চাই, আমরা চাই
আপডেট: ২০১৫-১১-০২ ০৮:৪১:০৯
ছেলের হত্যার বিচার চান না দীপনের বাবা কিন্তু মানুষ হত্যার বিচার চাই আমরা। দেশের আইন-কানুন, প্রশাসন – বিচার ব্যবস্থা সব দিকে যখন সম্পূরণ অনাস্থা, অবিশ্বাস, ঘৃণা এসে যায় তখন তিনি বিচার চাইবেন কেমন করে? কার কাছে? কিভাবে?
যে শিশুটির আগামী কাল জুনিয়র স্কুল সারটিফিকেট পরীক্ষার হলে যাবার কথা ছিল সেই শিশুটি কাল হয়তো অংশগ্রহণ করবে তার বাবার জানাযায়! কী অদ্ভুত এক পরিবেশের স্রিষ্টি হয়েছে যে, ঘরের ভিতরে বা বাইরে কোথাও আমরা নিরাপদে নাই।
এমন কি এই সব নিষ্টুর, অমানবিক, ন্রিশংস ঘটনার প্রতিবাদ করতেও আমরা ভয় পাই! ম্রিদুস্বরে কেবল ইনবক্স এ জানাই প্রতিবাদের নরম ভাষা বা অনুরোধ আসে, আমি যেন প্রতিবাদ না করি।
কিন্তু কেন এই ফিসফাস? কার ভয়ে? মরন? সেতো ঘাড়ের উপরে বসেই আছে? জীবন? সেতো মরনের দিকেই হেটে যাচ্ছে। তবে ভয় কিসের? ভয় নয় এটা জীবনের লোভ। একধরনের টিকে থাকার আকূল আবেদন!
একজন লিখেছেন, প্রতিবাদ করলেই তো মামলা আসবে ঘাড়ে সেই মামলা কে চালাবে? প্রতিবাদ করলে মামলা আসবে কেন? আপনি তো খুন করেননি। খুনের মামলার প্রতিবাদ করলে সরকার আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিবে এই চিন্তা মাথায় এলো কেন?
যুক্তি আছে নিশ্চয়ই। কারণ এক লিমন পঙ্গুত্ত বরণ করার পর এবং বহু মামলার আসামী হবার পর রাষ্ট্র শেষ অব্দি তাকে জানিয়েছে যে সে সন্ত্রাসী নয়। যে দেশে খুনীদের নাম উচ্চারনে আমরা ভয় পাই। সাক্ষীদের কোন নিরাপত্তা নাই তদন্তের নামে , বিচারের নামে মাস – বছর – যুগ – কাল পার হয়ে যায় সেই দেশে তো সকলে ভয় পাবেই।
একের পর এক মেসেজ পাচ্ছি। সকলেই ভয়ে আছেন, আতংকে আছেন। ভয় জীবন হারাবার ভয়। আতংক – মামলার আসামী হবার আতংক। কি আশ্চরয! ভয় পাবে তো খুনীরা। আতংকিত হবে তো খুনীদের গড ফাদার রা। আমরা কেন ? আমরা তো কোন ভয় পাবার মত কাজ করি নি যে ভীত হব! আতংকিত হব?!
কত দুঃসাহসী খুনীরা আর কত অসহায় আমরা যে দিনে দুপুরে বা মাঝরাতে বা ভর সন্ধ্যায় আমরা যে কেউ যে কারো হাতে যখন তখন খুন হয়ে যেতে পারি অবলীলায়! বাস করছি কোন দেশে?
তাহলে কী ধরে নিতে বাধ্য হব খুনীরাই শক্তিশালী আমরা শক্তিহীন? কেন বিচার চান না দীপনের বাবা সেই প্রশ্ন অবান্তর। তিনি হয়তো চারিদিকে দেখেই বুঝেছেন যে বিচার চেয়ে কোন লাভ নাই। কারন এই তো কিছুদিন আগেই তার সহকরমীর ছেলে অভিজিত ও খুন হয়েছে – প্রাকাশ্যে – নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই , সিসিটিভি ক্যামেরা থাকার পরও।
সেই তদন্ত , বিচার এর দইন্যদশা তো জীবিত থাকা অবস্থাতেই দেখছেন। তাই তিনি চান না। হয়তো বা সব কিছুর উপরে বিতশ্রদ্ধ হয়েই তিনি চান না। শুনলাম অভিজিত এর বই এর প্রকাশক হবার কারনেই নাকি দীপনের এই অবস্থা। তাহলে ব্যাপার টা কি দাড়াচ্ছে ? যিনি মুক্তমনে কিছু লিখবেন তিনি খুন হবেন। যিনি মুক্ত মনে সেটি প্রকাশ করবেন তিনি খুন হবেন।
যে বা যারা সেই বইটি পড়বেন আলোকিত হবেন তাদের কি হবে ? আমরাও খুন হব ? সেটা হতে আমার বাধা নাই। কিন্তু আমার খুনের বিচার রাষ্টকেই চাইতেই হবে। কারন এটা রাষ্টের ই দায়িত্ব। আমার পরিবারের নয়। রাষ্ট্র আমাদের। রাষ্ট্র কেবল খুনীর নয়। রাষ্ট্র কেবল একটি ধরমের বা জাতির বা গোষ্টির বা সম্প্রদায়ের নয়। রাষ্ট্র আমাদের। আমাদের সকলের। তাই অভিভাবক হিসাবে রাষ্ট্রকেই এই দায়িত্ত নিতে হবে।
একটা অদ্ভুত সময় পার করছি বেশ কিছুক্ষন। কেন যেন ঘুরে ফিরে কেবল অভিজিত আসছে। এবার টারগেট বুদ্ধিজীবিদের ছেলে। খুনীরা একটা “ ম্যাপিং” করেছে। যে সকল শিক্ষক্দের পরের জেনারেশন কে খুন করার মানচিত্র অঙ্কন করেছে তারা। এই লক্ষণ টা আসলে কি দিক নিরদেশনা দিচ্ছে ? সাধারন চোখে দেখলে খুনীদের টারগেট বরতমান নয়, তাদের লক্ষ্য “আগামী“কে ধংস করা।
একটি অন্ধকার আগামীতে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে ডাবিয়ে রাখা। সেই পরিকল্পনা মাফিক তারা এগুচ্ছে। আর তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছি আমরা। কারণ আমরা তাদের ভয় পাই। অথচ আমাদের করা উচিত ছিল তাদেরকে ঘৃণা করা। সেটা করতে সাহস পাই না।
অভিজিত বা দীপনের বাবাদের কে কেন বিচার চাইতে হবে ? তারা তো ভিক্টিম এর পিতা । বিচার চাইবো আমরা, যারা এই সব ঘটনা দেখছি , শুনছি , জানছি , পড়ছি , লিখছি। আমরা বিচার চাই– ন্যায় বিচার চাই। দ্রুত বিচার চাই। সঠিক বিচার চাই। আর রাষ্ট্র কিছুতেই এই দায়িত্ত এড়াতে পারবে না। কোন ভাবেই না। তাহলে রাষ্টের আর কোন অস্তিত্ত আছে বলে আমি মনে করি না। রাষ্ট মানে কেবল ভুখন্ড নয়। রাষ্ট্র মানে আরো অনেক কিছু !
দিলরুবা শারমিন
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী