মহিমাময় ত্যাগের ঈদ, ঘরে ঘরে খুশির দিন
ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-০৮-২২ ০০:৩০:১২
পবিত্র ঈদুল আজহা বুধবার। রাত পোহালেই ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর দিনটি উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় পশু কোরবানির মাধ্যমে সারা দেশের মুসলমানরা পালন করবে ঈদুল আজহা।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব সাধারণ মানুষের কাছে ‘কোরবানির ঈদ’ হিসেবেও পরিচিতি। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ধর্মীয় উৎসব মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে নিয়ে এসেছে খুশির বার্তা।
ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ কোরবানি। কোরবানির পশু কেনা, তার যত্ন-পরিচর্যার মধ্য দিয়েই ইদুল আজহার প্রস্তুতি শুরু। এরইমধ্যে সবাই সেরে ফেলেছেন কোরবানির পশু কেনার কাজটি। কোরবানির জন্য কেনা পশু ছোট বাচ্চাদের ঈদ আনন্দে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
ধর্মপ্রাণ ও উৎসবপ্রিয় বাংলাদেশের মুসলমানেরা প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা প্রিয়জনদের সঙ্গেই কাটাতে চায়। সে কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা মেনে নিয়েই ছুটে যায় প্রিয়জনের কাছে, গ্রামে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রাজধানী ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে গ্রামে চলে গেছে। কেউ কেউ রয়েছেন যাত্রাপথে। সড়ক ও লঞ্চ-ফেরি ঘাটে অবর্ণীয় ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে তাদেরকে। তারপরও বাবা-মা আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন এবং পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবে। মুরব্বিদের কবর জিয়ারত ও আত্মীয় স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়ার বিষয়টিও অগ্রাধিকার পাবে ঈদ উৎসবে।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের আশায় হযরত ইব্রাহীম (আ:) প্রিয় পত্র হযরত ইসমাইল (আ:) কে কোরবানির করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অপার কুদরতে ইসলামইল (আ:) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর এই ত্যাগের কথা স্মরণ করে মুসলমানরা পশু কোরবানি দেন। আর্থিকভাবে সামর্থবান মুসলমানদের কোরবানি দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হলেও এর পরের দুই দিন কোরবানি দেওয়া যায়। কোরবানির সুনির্দিষ্ট কিছু বিধানও রয়েছে। সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যে সমানভাবে আনন্দ ভাগভাগির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এই বিধান মেনেই কোরবানি করতে হয়। কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়।
মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়েছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। ঈদ ঘিরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে, অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোও এনেছে ভিন্ন আয়োজন, টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
পবিত্র ঈদুল আজহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, ‘ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজজীবনে প্রতিফলিত হলে পারস্পরিক হিংসা, বিদ্বেষ কমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে ঈদুল আজহার তাৎপয অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে জনকল্যাণকর কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভেদ-বৈষম্যহীন সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়ার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে প্রধান জামায়াত জাতীয় ঈদগাহ’র বদলে বায়তুল মোকররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
নগরবাসীর ঈদ আয়োজনকে সফল করতে সব রকম ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। কোরবানির পশু কেনা-বেচা, পশু রাখা এবং জবায়ের জন্য জায়গা সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। দ্রুত বর্জ অপসারণের জন্য প্রস্তুত করপোরেশন হাজার হাজার কর্মী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্যা সংস্থা।