শেয়ারবাজারে কারসাজি,১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৯-০৫-২২ ১০:৫৫:৫৭
বিগত দশকের শেষ দিকে শেয়ারবাজারে কারসাজির ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় মার্জিন ঋণের সীমা অতিক্রম করে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচ কর্মকর্তা, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন বিও হিসাবধারী।
দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা মডেল থানায় এসব মামলা দায়ের করেছেন। ১২টি মামলায় ৬১ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের দায়ের করা সবক’টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচ কর্মকর্তাকে। এরা হলেন— আইসিবির সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, তিন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. এহিয়া মন্ডল, মো. সামছুল আলম আকন্দ ও শরিকুল আনাম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার। অন্য আসামিরা হলেন— আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সামাদ ও তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার, তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টারের একেএম রেজাউল হক ও তার স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা; মোহাম্মদপুর খিলজী রোডের লাইলা নুর; তেজগাঁও মণিপুরিপাড়ার একেএম আতিকুজ্জামান; গ্রিন রোডের কাজী মাহমুদুল হাসান; গুলশানের শেখ মেজবাহ উদ্দিন ও তার মেয়ে শিমা আক্তার এবং শ্যামলীবাগের বুলবুল আক্তার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই ধরনের অভিযোগে রমনা থানায় আরেকটি মামলা হয়। সে মামলায় আইসিবির পাঁচ কর্মকর্তা ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদকে আসামি করা হয়। একই দিন মামলার তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে দুদক। এরা হলেন— টিপু সুলতান ফারাজি, মো. এহিয়া মন্ডল ও মো. আব্দুস সামাদ।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, শেয়ারবাজার জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে। বেশকিছু মামলা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মামলার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে উল্লম্ফনের সময় কারসাজির ঘটনাগুলো ঘটে। আইসিবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসটিসিএল) কিছু কর্মকর্তা গ্রাহককে অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের শেষ দিকে এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে আইসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবধারীদের মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমার বাইরে শেয়ার কেনার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি তাদের ডেবিট স্থিতির ওপর টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৯ সালের শেষ দিকে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অতি মুনাফার লোভে গ্রাহক ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নেগেটিভ পারচেজ থাকা সত্ত্বেও নিজ অ্যাকাউন্টের সীমার বাইরে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটিয়ে সরকারি অর্থে শেয়ার কেনেন। পরে শেয়ারের দর পড়ে যাওয়ায় সরকারের বড় অংকের আর্থিক ক্ষতি হয়। আইএসটিসিএলের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা প্রতিদিন লেনদেন শেষে গ্রাহক হিসাবের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় আদেশ যথাযথ আছে কিনা, তা নিশ্চিত না করে জেনেশুনে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেরা লাভবান হয়ে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের শুরুর দিকে আইএসটিসিএলে জামানত ছাড়াই নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত মার্জিন ঋণ বিতরণসহ আরো কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ সময় ২৩৮ কোটি টাকার অনিয়ম হয় বলে দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং আইসিবির আরো বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।