কমেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ

:: আপডেট: ২০১৮-০৯-০৬ ১১:৩৫:০৮


সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণে অনেক ব্যাংকের অনীহা এবং তারল্যের টানাটানির কারণে কমে গেছে বেসরকারি খাতে ঋণ। গত জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ এক হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। আগের মাস জুন শেষে মোট ঋণ ছিল ৯ লাখ ৭ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। এতে আগের মাসের তুলনায় ঋণস্থিতি কমেছে ৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে যা শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি, নির্বাচনের আগে নতুন বিনিয়োগে ব্যাংক ও গ্রাহকদের বাড়তি সতর্কতাসহ বিভিন্ন কারণে ঋণস্থিতি কমেছে বলে সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগের মাসের তুলনায় ঋণস্থিতি কমলেও গত জুলাই পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর আগের মুদ্রানীতিতে একই রকম প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হলেও গত জুনে প্রবৃদ্ধি হয় ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত এক বছরে কখনও বেসরকারি খাতের ঋণে ১৬ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয় গত বছরের নভেম্বরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারি খাতের ওপর ভর করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এখন বেসরকারি খাতে ঋণ কমাটা অর্থনীতির জন্য খুব নেতিবাচক। কেননা এ রকম প্রবণতা থাকলে কর্মসংস্থান কমবে। অর্থনীতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির পক্ষ থেকে জুলাই মাসে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদে মেয়াদি আমানত নিয়ে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। যে কারণে লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক ব্যাংক আপাতত নতুন করে আর ঋণ দিচ্ছে না।
এ ছাড়া নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাসহ সব শ্রেণির ব্যক্তিদের মধ্যে ঋণ হিসাব স্বচ্ছ রাখার একটা প্রবণতা থাকে। এ রকম সময়ে ঋণ আদায় জোরদারে ব্যাংকগুলোও নানা পদক্ষেপ নেয়। সব মিলিয়ে ঋণস্থিতি কমেছে।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে ঋণ বিতরণে একটু ধীরগতি দেখা দেয়। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী মার্চের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত অনুপাত কমিয়ে ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর ৮৯ শতাংশে নামিয়ে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ ছাড়া আমানতে ৬ শতাংশ এবং ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের একটা প্রভাবও আছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ ধীর করে দিয়েছে। যদিও কোনো ব্যবসায়ীর ঋণ না পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে না বলে জানান তিনি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় গত কয়েক বছর অধিকাংশ ব্যাংকের হাতে প্রচুর অলস অর্থ ছিল। ঋণের সুদহার নেমে আসে এক অঙ্কে। অনেকদিন ধরে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণ হচ্ছিল। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিনিয়োগ বাড়তে থাকায় নগদ টাকার ওপর চাপ তৈরি হয়। আবার ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারার খবরে আমানত সংগ্রহে হিমশিম খান উদ্যোক্তারা। আগ্রাসী বিনিয়োগ ঠেকাতে গত জানুয়ারিতে হঠাৎ করে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপর সুদহার বেড়ে আবার দুই অঙ্কে উঠে যায়। নির্বাচনের বছরে সুদহার কমাতে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হলেও কাজের কাজ না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা মেলে। গত ১ জুলাই থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেয় ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বা বিএবি।