গ্রামীণফোনের কর্মীদের চাকুরী বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৩ ০২:১৩:১৬
টেকনোলজী বিভাগের ৬০০ কর্মী সহ অন্যান্য বিভাগের মোট প্রায় ১০০০ কর্মীর চাকুরী হারানোর আশংকা প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন। এতে সংগঠনের সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারন সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ শাফিকুর রহমান মাসুদ। মাসুদ বলেন, গ্রামীনফোন “সিডিসি” নামের একটি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে গ্রামীণফোনের টেকনোলজি বিভাগের প্রায় ছয় শতাধিক কর্মী চাকুরী হারাতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, টেকনোলজি বিভাগের সাধারন কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে উক্ত প্রজেক্টের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। কর্মীরা প্রতিবাদ করলে, কোম্পানীর পক্ষ থেকে ইমেইল দিয়ে হুমকি প্রদান সহ শ্রম অধিদপ্তরে সাধারন কর্মীদের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। তারা দাবী করেন, ২০০৭ সাল থেকে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) স্থায়ী কর্মীসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) কর্মী গ্রামীণফোন থেকে বিদায় নিয়েছে।
২০০৭ সালে গ্রাহকসেবা কেন্দ্র জিপিএসডি’র প্রায় ৫০০ কর্মীকে ছাঁটাই করার মাধ্যমে গ্রামীণফোনে চাকুরীচ্যুত করার অভিযান শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে মানবসম্পদ বিভাগে পুনর্গঠনের নামে প্রায় অর্ধ শতাধিক কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করা হয় এবং গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন রেজিষ্ট্রেশন আবেদন অনিস্পন্ন থাকাবস্থায় ২০১২ সালের জুলাই মাসে মধ্য রাতে একটি ইমেইল দিয়ে আরো প্রায় দেড় শতাধিক কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এই চাকুরীচ্যুতির আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২২ জন কর্মী শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন, যারা এখনো ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় আছেন। এছাড়া গত দুই বছরে ধাপে ধাপে কাস্টমার সার্ভিসের প্রায় দুই শতাধিক কর্মীকে বিদায় করা হয়।
২০১২ সালের গ্রামীণফোন এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) গঠিত হয় এবং রেজিষ্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নের নিকট রেজিষ্ট্রেশনের আবেদন করা হয়। সকল নিয়ম কানুন পরিপালন করে আবেদন করা হলেও, রেজিষ্ট্রেশনের আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। উল্লেখ্য, আইন অনুসারে কোন দলিল, তথ্য বা উপাত্তের প্রয়োজন হলে আবেদন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নকে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু কোন ধরনের সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে উক্ত আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ডিজিটালাইজড করার ম্যাধ্যমে গ্রাহক অভিযোগের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমলেও গ্রামীণফোনের কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকে আউটসোর্স করার ফলে গ্রাহক সেবার মান অনেকটাই কমেছে। প্রায়শই অভিযোগ পাওয়া যায় যে, কলসেন্টারে কল করে এখন আর মানসম্মত সেবা পাওয়া যায় না। অনেক সময় অপেক্ষা করে এজেন্টকে পাওয়া গেলেও সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় না। আমরা মনে করি, প্রকৃত গ্রাহকসেবা দিতে হলে গ্রামীণফোনকে নিজস্ব কলসেন্টার চালু করতে হবে।
কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টকে আউটসোর্স করার পর ২০১৮ সালে গ্রামীণফোনের টেকনোলজি ও কমার্শিয়াল ডিডিভশনের বাদে অন্যান্য ডিভিশনের কর্মী সংখ্যা কমানোর জন্য টেলিনর থেকে প্রজেক্ট ব্রীজ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত চলবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরো অনেককেই স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণের প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে এবং হবে। এর পাশাপাশি ২০২০ নামে আরেকটি প্রজেক্ট শুরু হয়েছে, যার মাধ্যমে অন্যান্য বিভাগের আরো কত কর্মী চাকুরী হারাবে তা অনিশ্চিত।
প্রজেক্ট ব্রীজ চলাকালীন সময়ে টেকনোলজি বিভাগে সিডিডি নামক প্রজেক্টে ঘোষনা করা হয়েছে। টেলিনরের মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানেসিডিসি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রজেক্টের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, নেটওয়ার্কের উন্নয়নের জন্য এটি প্রয়োজন রয়েছে, যার সক্ষমতা গ্রামীণফোনের নেই। কিন্তু, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন যে, এই প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণফোনের টেকনোলজি বিভাগের হাতেগোনা কয়েকজন বাদে প্রায় সকল কর্মী চাকুরী হারাবেন।
উল্লেখ্য, নেটওয়ার্কেরর মান নির্ভর করে স্পেক্টট্রাম, টাওয়ার তথা যন্ত্রপাতি সচল থাকা এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনী সংখ্যক টাওয়ার থাকা। গ্রামীণফোনের প্রয়োজনীয় স্পেক্টট্রাম রয়েছে। প্রয়োজনে সরকারের সহযোগীতা নিয়ে আরো স্পেক্টট্রাম কিনতে পারে। গ্রামীণফোনের টাওয়ার তথা যন্ত্রপাতি সচল থাকা মূলতঃ নির্ভর করে বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা এবং তার অবর্তমানে ব্যাটারী ও জেনারেটর ব্যক-আপ থাকার উপর। গ্রামীণফোনের টাওয়ার তথা যন্ত্রপাতি সচল থাকার হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া, টাওয়ারগুলোতে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ এবং জেনারেটর রাখার মাধ্যমে এই সচল রাখার হার আরো রাড়ানো সম্ভব এবং সেজন্য গ্রামীণফোনকে আরো বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর গ্রাহকদের জন্য আরো মানসম্মত নেটওয়ার্ক সেবা দিতে হলে টাওয়ার এবং যন্ত্রপাতির জন্য জন্য আরো বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সিডিসির প্রয়োজন নেই।
এর আগে জিপি’র আইটি ডিপার্টমেন্টের কাজ এ্যক্সেঞ্চার নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়, যেটি বিশে^র অন্যতম নামীদমি আইটি কোম্পানী। কিন্তু তারা এদেশে ব্যর্থ হয়ে চলে গেছে। গ্রামীণফোনের আইটি ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের প্রথমে জিপিআইটি কোমপানীতে পাঠানো হয়, যার অধিকাংশ শেয়ার এ্যক্সেঞ্চার কিনে নেয়। পরবর্তীতে এ্যক্সেঞ্চার এদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিলে অধিকাংশ কর্মীই চাকুরী হারান।
বর্তমানে অনেকেই অভিযোগ করছেন, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের মান দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে তারা সম্ভাব্য দুটিকারন বলেন; এক. গ্রাহক সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সেই হারে টাওয়ার তথা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বাড়ানো হচ্ছেনা,অর্থাৎ আয় বা মুনাফার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনিয়োগ করা হচ্ছে না এবং দুই. নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স এর কাজ আউটসোর্স করা। নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স এর কাজও নামীদামি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে, কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছে। এসব ঘটনা প্রমান করে, আউটসোর্স করে নেটওয়ার্কের মান ভাল হবে না। বরং দীর্ঘদিন ২০ টি বছর যে কর্মীরা নেটওয়ার্ক মান বৃদ্ধি করেছে, তাদের চাকুরীর নিশ্চয়তা বিধান করে, আউটসোর্সি বন্ধ করে, নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে কাজ করানোর মাধ্যমে নেটওয়ার্কের মান বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে নিজস্ব কর্মী সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে বিটিআরসি এবং গ্রাহকরা ভূমিকা পালন করতে পারে তারা আশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস যাতে নিশ্চিত হয়, সেজন্য বিটিআরসি’র নজরদারি বাড়াতে হবে। অপরদিকে, গ্রাহকরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে, কোম্পানী তার সেবার মান বাড়াতে বাধ্য হবে। এর ফলে, কর্মীদের চাকুরীর নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে। জিপিইইউ এর পক্ষ থেকে শ্রম মন্ত্রনালয়কে উদ্দেশ্য করে আরো বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়নের কোন আবেদন পেলে তা কিভাবে সহজে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া যায়, সেব্যাপারে শ্রমিকদের সহায়তা করতে পারে। মালিকপক্ষ কোন অনুমোদনের জন্য আবেদন করলে, তা যথাযথ পরীক্ষা নীরিক্ষা করে, শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে, যদি সেই আবেদন ন্যায়সঙ্গত হয়, তবেই অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
জিপিইইউ নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, সরকার আরো অধিক শ্রমিক বান্ধব আইন পাশ করেন, যাতে শ্রমিকরা সহজেই বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায়। একই সাথে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে যদি শ্রমিকদের প্রতিকূলে কোন বিধান প্রস্তাব করা হয়ে থাকে, তবে তা সংশোধন করার দাবী জানানো হবে।
সভায় বাংলালিংকে গতকাল যেভাবে ৩৭ জন কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে, তাতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কোম্পানীটি বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও তাদের কেন মুনাফা হয়না, নাকি অন্য কোন মেকানিজম আছে তা তদন্তের দাবী করেন এবং একই সাথে বাংলালিংকের কর্মীদের চাকুরী নিশ্চয়তা বিধান করা, যথাযথ কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে যোগদানকারী বাংলালিংক এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি সোহাগ বলেন, সম্পূর্ন বেআইনীভাবে রাতের আধারে যেভাবে কর্মীদের চাকুরীচ্যুত করা হযেছে তা নজিরবিহীন। তিনি অনতিবিলম্বে কর্মীদের চাকুরী ফিরিয়ে দেবার আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলেনেইউএনআই বাংলাদেশের সেক্রেটারী মোস্তাফা কামাল সহ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রফিকুল কবির সৈকত,ইমরুল কায়েস, জিয়াউর রহমান, মাযহারুল হক, এএনএম মাইনুল হোসেন, মির্জা আতিকুজ্জামান