বাসাবাড়ি ও কারখানায় গ্যাসের জন্য হাহাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৬ ০৮:৪১:২৯
সাগরের তলদেশে স্থাপিত (সাবসি) পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সাবসি পাইপলাইনের একটি জরুরি নির্গমন ভাল্ক্বে (ইমার্জেন্সি ভাল্ক্ব) সমস্যা ধরা পড়ে। এরপরই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় দায়িত্বে নিয়োজিত কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। ত্রুটি সারানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে সূত্র বলছে, সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে শিল্প, আবাসিকসহ সব খাতে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের জোগান কমে গেছে। রাজধানী ঢাকায় অধিকাংশ স্থানে চুলা ঠিকমতো জ্বলছে না। শিল্প কারখানায়ও একই সংকট। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে সারকারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে সাবসি পাইলাইনের ত্রুটির কারণে প্রায় চার মাস পর এলএনজির সরবরাহ শুরু হয়। সূত্র জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাইপলাইনে ত্রুটি ধরা পড়ে। পানির প্রায় ৩৫ মিটার নিচে অবস্থিত পাইপলাইনের ইমার্জেন্সি ভাল্ক্বের হাইড্রোলিক সুইচে সমস্যা দেখা দেয়।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, পাইপলাইনে একটু সমস্যা হয়েছে। সেটি সারানোর চেষ্টা চলছে। আশা করা যায়, দুই-একদিনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। তবে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাল্ক্বটি পরিবর্তন করতে হবে। এটি বিদেশ থেকে আনতে হবে, যা একটু সময়সাপেক্ষ। তার মতে এলএনজি সরবরাহ শুরু হতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
এদিকে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে বিদ্যুতে প্রায় ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমেছে। গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট তীব্র হয়েছে। ঢাকায় বাসাবাড়িতেও গত রোববার থেকে গ্যাস সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস হাবীব জানান, রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গ্যাস ছিল না। সোমবারও একই অবস্থা। হঠাৎ গ্যাস ঘাটতির কারণ সম্পর্কে তিতাসের স্থানীয় কার্যালয়ে ফোন করে উত্তর মেলেনি বলে জানান তিনি। কচুক্ষেত ইব্রাহীমপুরের গৃহিণী আকিমুন নাহার জেসমিন জানান, সব সময় সমস্যা থাকলেও গত দু’দিন ধরে গ্যাস একদমই মিলছে না। সারাদিন চুলা জ্বলে না। গ্যাস মিলছে রাত ১২টার পরে। ফলে রাত জেগে দিনের রান্না সারতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, এলএনজির কারণে সার্বিক গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ বেড়েছিল। সারকারখানাগুলো চালু হয়েছিল। সরবরাহ বেড়েছিল শিল্পেও। দু’দিন থেকে এলএনজির সরবরাহ বন্ধ থাকায় সব বিতরণ কোম্পানিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিল্পে ও আবাসিকেও সমস্যা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস পাওয়া গিয়েছিল ১১০ কোটি ঘনফুট। সোমবার মিলেছে ১০১ কোটি ঘনফুট গ্যাস। দেশের ভয়াবহ জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে ২০১০ সালে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ আট বছরের প্রচেষ্টার পর গত ২৪ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনালটি (এফএসআরইউ) কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এরপর চার দফা সরবরাহ শুরুর তারিখ দেওয়া হলেও সাবসি পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সবশেষে গত ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতা থাকলেও পাইপলাইন সীমাবদ্ধতার কারণে সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল।