চিনি রপ্তানিরবাজার খুঁজছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক আপডেট: ২০১৮-১১-১১ ১১:৩৪:৫০


চিনির বাড়তি উৎপাদন ভারতীয় ভোক্তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। খুচরা পর্যায়ে কম দামে চিনি কিনতে পারছেন তারা। তবে স্বস্তিতে নেই চিনি উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারকরা। বাড়তি উৎপাদনে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম কমেছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত চিনি রপ্তানিতে হন্যে হয়ে বাজার খুঁজছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। কিন্তু পণ্যটির রপ্তানিতেও খুব একটা আশার আলো দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকায় ভারতীয় চিনি রপ্তানিকারকরা খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না। এর ওপর মজুদ বৃদ্ধির খবর নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। চলতি বছর শেষে ভারতে চিনির সমাপনী মজুদ ১ কোটি ১৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খবর বিজনেস লাইন ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

ভারত বিশ্বের শীর্ষ চিনি মজুদকারী দেশ। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল শেষে ভারতে চিনির সমাপনী মজুদ দাঁড়িয়েছিল ৬৫ লাখ ৭০ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। তবে এক বছরেই দেশটিতে চিনির মজুদ রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর শেষে চিনির সমাপনী মজুদ দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৭৫ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। সেই হিসাবে, চলতি বছর শেষে ভারতের গুদামগুলোয় অতিরিক্ত ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার টন চিনি মজুদ থাকবে। আগামী বছর নাগাদ দেশটিতে চিনির মজুদ আরো ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে ১ কোটি ১৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ভারতে চিনির মজুদ বাড়ার পেছনে বাড়তি উৎপাদনকে চিহ্নিত করেছে ইউএসডিএ। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ভারতে মোট ২ কোটি ২২ লাখ টন চিনি উৎপাদন হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সাল শেষে চিনির উৎপাদন ৪৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টনে পৌঁছাতে পারে। আগামী বছর নাগাদ ভারতে চিনি উৎপাদন আরো ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। মূলত অনুকূল আবহাওয়ায় আখের বাম্পার ফলনের জের ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারতে পণ্যটির উৎপাদন বাড়তি রয়েছে।

উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ভারতের বাজারে চিনির দাম কমেছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও আর্থিক লোকসানের কারণে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আখচাষীদের পাওনা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এজন্য চিনি রফতানি বাড়াতে হন্যে হয়ে বাজার খুঁজছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। চলতি মাসের শুরুতে ভারতের খাদ্য সচিব রবিকান্তের নেতৃত্বে দেশটির একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। ঢাকায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশে চিনি রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন ও চিনি পরিশোধনে কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতেও আগ্রহের কথা জানিয়েছে ভারত। আগামী জানুয়ারিতে চীনের বাজারে চিনি রফতানি শুরুর বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চিনি রফতানিকারক দেশ ভারত।

মূলত বাড়তি উৎপাদনের জের ধরে ভারতে চিনির বিশাল মজুদ গড়ে উঠছে। এর ফলে দেশটির বাজারে চিনির দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে মজুদ কমিয়ে রেখে দরপতনের লাগাম টানতে চিনি রফতানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই চিনি রফতানি বাড়াতে বাংলাদেশ, চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ইউএসডিএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯ সাল নাগাদ ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬০ লাখ টন চিনি রফতানি হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনগুলোয় দেশটি বৈশ্বিক চিনি রফতানির অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।