স্বামী হতে যোগ্যতা লাগে
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১১-১৬ ১৪:৪৪:৩৫
প্রেমিক হতে হয়তো যোগ্যতা লাগে না, কিন্তু স্বামী হতে হলে যোগ্যতা ঠিকই লাগে। এই জিনিসটাই বেশির ভাগ ছেলে বুঝতে চায় না। এই জন্য রোমিও, মজনু, ফরহাদ ছেলেরাই হয়।
এক ছেলে বিষ খেয়ে হাসপাতালে এসেছিল। পছন্দের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, তাই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়েছে সে। হাসপাতালে আসার পর ওয়াশ দিয়ে বেডে পাঠালাম। এরপর এক ফাঁকে গিয়ে একাকী দেখা করলাম।
– কিসে পড় তুমি?
– অনার্সে ফার্স্ট ইয়ার।
– আর মেয়ে?
– ইন্টার।
– মেয়ের জামাই কী করে?
– একটা কোম্পানিতে চাকরি।
– শামসুর রাহমানের ‘একটি ফটোগ্রাফ’ কবিতা পড়েছ?
– না।
তখন নেট থেকে সার্চ দিয়ে কবিতাটি বের করে পড়ে শুনালাম।
কবিতাটিতে, দেয়ালে বাঁধানো ছেলের ছবির সামনে যখন বাবাকে অতিথি জিজ্ঞাসা করল, এটি কার ছবি? বাবা নির্লিপ্তভাবে জবাব দিল ‘আমার মৃত ছেলের’।
জবাব দেয়ার সময় হঠাৎ খেয়াল করেন, তার মনে মৃত ছেলের জন্য কোনো কষ্টই নেই! কত সহজেই তিন বছরে সব কষ্ট ভুলে গেছেন, অথচ একসময় কতই না কষ্ট পেয়েছিলেন ছেলে মারা যাওয়াতে।
এটাই হলো বাস্তবতা।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সব কষ্টই মানুষ ভুলে যায়। কারো জন্য এই নির্দিষ্ট সময়টা কয়েক দিন, কারো জন্য কয়েক মাস বা কয়েক বছর…কিন্তু একসময় ‘সময়’ সবকিছু ভুলে যাবেই।
ছেলেটিকে বললাম, “দেখ, আজ তুমি মেয়ের জন্য বিষ খেয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছ, আর মেয়েটি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারীতে পরিণত হয়ে বসে আছে।
তুমি ছিলে দীর্ঘদিনের চেনা মানুষ, সেই মানুষটিই তার কাছে এখন হয়ে গেছ সবচেয়ে অচেনা। আর যে লোকটিকে বিয়ে করেছে, সে একদম অচেনা মানুষটিই এখন তার সবচেয়ে চেনা।
এখন মেয়েটিকে না পাওয়ার কষ্টে নিজেকে হয়তো নষ্ট করছ। কিন্তু একসময় মেয়েটির জন্য এই অনুভুতি আর থাকবেও না।
মানুষ যেখানে নিজের মৃত মা-বাবার কষ্ট কয়েকদিন পর ভুলে যায়, সেখানে এই কষ্ট তো তেমন কিছুই না। একসময় ঠিকই ভুলে যাবে মেয়েটিকে। কিন্তু ততক্ষণে তুমি সব হারিয়ে সম্পূর্ণ নিঃস্ব ও ব্যর্থ একজন ব্যক্তি হবে তখন।
যে সময়টা এভাবে নষ্ট করে অপচয় করেছ, সেই সময়টা নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে দাও, চাকরি কর। এমনি তখন বিয়ে করার জন্য অনেক মেয়ে পাবে। সুন্দরী মেয়ের মা-বাবারাই এসে তোমাকে খুঁজে নিবে।
মাথায় এটা খুব ভালোভাবে ঢুকিয়ে নাও, ‘প্রেমিক হতে হয়তো যোগ্যতা লাগে না, কিন্তু স্বামী হতে হলে যোগ্যতা ঠিকই লাগে।’
তাকিয়ে দেখি ছেলেটি কাঁদছে। মনে হলো কিছুটা হলেও ছেলেটি বুঝল।
এর সঙ্গে আমিও বুঝলাম ‘বিরহই আসলে সত্যিকার প্রেম, কিন্তু সে প্রেম মূল্যহীন।’
লেখক: ডা. তারাকী হাসান মেহেদী, মেডিকেল অফিসার, বিসিএস (স্বাস্থ্য)।