রিস্ক রিপোর্টিংয়ে উপকৃত হবেন শেয়ারহোল্ডাররা

পুঁজিবাজার ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১১-২৮ ০৮:১৪:৫৫


আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের নিরীক্ষা পদ্ধতিতে বেশকিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। রিস্ক রিপোর্টিং বা বার্ষিক প্রতিবেদনে কোম্পানির ব্যবসায় বিভিন্ন ঝুঁকি তুলে ধরা এর মধ্যে অন্যতম। ৩১ ডিসেম্বর বা তার পর হিসাব বছর সমাপ্ত করা সব কোম্পানির প্রতিবেদনে নিরীক্ষককে রিস্ক রিপোর্ট প্রদান করতে হবে। এতে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সেখানে বিদ্যমান ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডাররা একটি ধারণা পাবেন, যা তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।

সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টিং দ্য নিউলি রিভাইজড অডিট রিপোর্ট ফরম্যাট’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফআরসির চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নুরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এখলাসুর রহমান।

কর্মশালায় সংশোধিত নতুন নিরীক্ষা পদ্ধতির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফআরসির স্ট্যান্ডার্ড সেটিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল করিম। ব্যাংকিং খাতের নিরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফআরসির ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট মনিটরিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ।

এফআরসি চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনে রিস্ক রিপোর্টিং অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এফআরসি ও পেশাদার হিসাববিদদের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নিরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে নিরীক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এফআরসির স্ট্যান্ডার্ড সেটিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল করিম সংশোধিত নতুন নিরীক্ষা পদ্ধতি অনুসারে আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা প্রতিবেদন, নিরীক্ষকের মতামত ও এর ভিত্তি, গোয়িং কনসার্ন হিসেবে উল্লেখযোগ্য অনিশ্চয়তা থাকলে সেটি প্রতিবেদনে তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন যুক্ত হওয়া সার্বিক ঝুঁকির প্রতিবেদন, এমফেসিস অব ম্যাটার, কি অডিট ম্যাটার (কেএএম), আনুষঙ্গিক অন্য বিষয় ও তথ্য, আর্থিক বিবরণী ও নিরীক্ষকের দায়বদ্ধতা, আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি নিরীক্ষার সময় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পদ্ধতি ও নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

ব্যাংকিং খাতের নিরীক্ষা বিষয়ে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এফআরসির ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্ট মনিটরিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ এফআরসি গঠনের উদ্দেশ্য ও এর দায়দায়িত্ব, নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এফআরসির প্রত্যাশা, ব্যাংকিং খাতের ক্রেডিট, ডকুমেন্টেশন ও জামানত-সংক্রান্ত জালিয়াতি, খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আলোচনা করেন।

তাছাড়া তিনি ব্যাংকিং খাতের আর্থিক প্রতিবেদনে উইন্ডো ড্রেসিংয়ের (কৃত্রিমভাবে আর্থিক অবস্থা ভালো দেখানো) বিভিন্ন দিক, মানি লন্ডারিং, আইনবহির্ভূত নগদ লেনদেন, নগদ সুবিধা প্রদানে জালিয়াতি, ঋণসংক্রান্ত অনিয়ম, দুর্বল নৈতিক অবস্থান, নিরীক্ষকদের সমঝোতা করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দেশের হিসাব ও নিরীক্ষা মানদণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের (বিএফআরএস) পরিবর্তে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) আত্মস্থ করেছে আইসিএবি। সদস্য নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ইনস্টিটিউটের নির্দেশনা, ২০১৮ সালে হিসাব বছর শুরু করা সব কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় তা অনুসরণ করতে হবে।

কর্মশালায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু, সাবেক প্রেসিডেন্ট কামরুল আবেদীনসহ আইসিএবির অনেক সদস্য অংশ নেন।