হিজাব পরা প্রথম মুসলিম নারী এমপি লায়লা সুইডিশ পার্লামেন্টে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৮-১২-১৮ ১৭:৩৭:০০


হিজাব পরা প্রথম মুসলিম নারী এমপি লায়লা সুইডিশ পার্লামেন্টে

সুইডেনের পার্লামেন্টে হিজাব পরা একজন নারী বক্তব্য রাখছেন- এমন দৃশ্য হয়তো সাম্প্রতিককালের মধ্যে প্রথম দেখা যাবে। যে দেশটি ডানপন্থি, যাদের হিজাব বা মুসলিম নারীদের পোশাকের প্রতি বিতৃষ্ণা রয়েছে, অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সেখানকার পার্লামেন্টে  প্রথম এমন একজন নারী এমপি বক্তব্য রাখছেন- এটা যেন তাদের সেই ডানপন্থি নীতির প্রতি এক চ্যালেঞ্জ। এ সপ্তাহেই তাকে এ পোশাকে দেখা যাবে সুইডেনের পার্লামেন্টে। তিনি লায়লা আলী এলমি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তার পরিবার সোমালি। লায়লার বয়স যখন মাত্র দু’বছর তখন তার পরিবার দেশের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে চলে যায় সুইডেনে। তারপর সেখানেই তার বেড়ে উঠা।

এবার শরতে সুইডেনে নির্বাচন হয়। এ সময়ে তিনি অভিবাসীদের প্রতি যে শত্রুতামূলক মনোভাব দেখানো হয় তার বিরুদ্ধে কথা বলেন। বিস্ময়করভাবে বিজয়ী হন। তাকে এ সপ্তাহে দেখা যাবে পার্লামেন্টে বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।

লায়লা আলী এলমি বলেছেন, আমি গ্রিন পার্টির সদস্য। নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমার বিরুদ্ধে যে বর্ণবাদী প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে তাই আমাকে বিজয়ী হতে সহায়তা করেছে। আমি নির্বাচিত হয়ে এমপি হই ওই বর্ণবাদীরা আসলে তা চায় নি। এর জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না।

লায়লা আলী এলমির বয়স মাত্র ৩০ বছর। তার আরো একটি দিক আছে। তিনি অভিবাসন ইস্যু নিয়ে কাজ করেছেন। অভিবাসীদের কাছে ভোট চেয়েছেন, যেখানে উগ্র ডানপন্থি ভোট বেড়ে যাচ্ছিল। অ্যাঙ্গারেড এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে লড়াই করেছেন তিনি।

অ্যাঙ্গারেড এলাকায় বসবাস করেন পিছিয়ে পড়া অভিবাসীরা। সেখানেই গত ২৮ টি বছর বসবাস তার ও তার পরিবারের। ওই এলাকাটিতে বেকারত্ব, গাদাগাদি করে বসবাস বড় সমস্যা। এ ইস্যুতে তিনি বলেন, ওই এলাকার যেসব মানুষ মনে করেছেন তাদের জন্য একটি কণ্ঠস্বর প্রয়োজন তারাই আমাকে বিজয়ী করেছেন। এটা তাদের কাছে বিস্ময়ের কিছু নয়। আমি কথা বলি অ্যাঙ্গারেড এলাকার জন্য। যদি কেউ ওইসব মানুষের সঙ্গে সেখানে বসবাস না করেন, তাদের সঙ্গে একটি দিন না কাটান তাহলে তিনি তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না।

সুইডেনে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ বা তাদের আবাসিক এলাকাকে আলাদা করে রাখার কারণে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ওই সময় তরুণ যুবকরা উত্তর স্টকহোমে দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়। গাড়িতে, স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের সঙ্গে রণে লিপ্ত হয়। তারা তখন বলেছিল, তারা পুলিশের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এটা করছে।

তারা আরও জানায়, সুইডেনে জন্ম গ্রহণ করা সত্ত্বেও তারা সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো আচরণ পাচ্ছে। তারপর থেকেই এই ধারাটি চলছে। অতি সম্প্রতি মুখোশধারী সশস্ত্র তরুণরা হাতবোমা সহ গুটেনবার্গে ৮০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় কিছু রাজনীতিক বলতে থাকেন, ওই বসতিটি শাসনের অযোগ্য।

উগ্র ডানপন্থি সুইডেন ডেমোক্রেটরা অভিবাসন সংশ্লিষ্ট এসব সমস্যার সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত। সেপ্টেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছে তাতে এ দলটি পেয়েছে শতকরা ১৭ ভাগ ভোট। ২০১৪ সালে তারা পেয়েছিল শতকরা ১২ ভাগ ভোট।

লায়লা আলী এলমির কাছে শুধু অভিবাসন ইস্যুই নয় তার কাছে অভিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন বেশির ভাগ মানুষের জীবনজীবিকা।

তিনি বলেন, সুইডেন ডেমোক্রেট যা বলে তা হলো, এখানে যা কিছু অন্যায় হচ্ছে তার সবই হচ্ছে অভিবাসীদের কারণে। সুইডেন বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে দেশে নিয়েছে। এ জন্য এসব হচ্ছে। কিন্তু তাদের এ অভিযোগ সত্য নয়।

তিনি আরো বলেন, আমি বলতে চেষ্টা করছি যে, এটি একটি জাতীয় ইস্যু। মানুষের কাজ বা চাকরি নেই। তারা বিচ্ছিন্ন একটি এলাকায় বসবাস করে। সমাজের অংশ হওয়া থেকে তাদেরকে দূরে রাখা হয়েছে। যখন মানুষ দেখতে পায় তাদেরকে বড় করে দেখা হচ্ছে তখন তার মধ্যে মর্যাদার অনুভূতি কাজ করে।

সমাজ থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য অপরাধের বিস্তার ঘটে। সুইডেনে তাই অধিক হারে সমতা, বৈষম্য ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আইন প্রয়োজন আমাদের।

লায়লা আলী এলমিকে কারা ভোট দিয়েছেন এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন বলে মনে করেন গুটেনবার্গ ইউনিভার্সিটির রাজনীতির প্রফেসর জেহানাস হিনফরস। তবে তিনি মনে করেন, একজন যুবতী ও উদার মুসলিম নারীকে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে মৌলিক পরিবর্তন লক্ষণীয়।

এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, লায়লা কোনো অভিবাসন বিষয়ক কার্ড ব্যবহার করেন নি। তিনি এটাও বলেন নি যে, আমরা মুসলিমদেরকে কঠোরভাবে একত্রিত হতে হবে। এর পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেছেন স্কুল, সমাজবিচ্ছিন্ন করে রাখা ও কর্মক্ষেত্রের অবস্থান। যারা ওইসব অনগ্রসর স্থানগুলোতে বসবাস করেন তাদের কাছে এসব ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লায়লা যেহেতু সেখান থেকেই এসেছেন তাই তিনি জানতেন কি ইস্যুতে কথা বলছেন।

উল্লেখ্য, একজন দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন লায়লা আলী এলমি। তিনি নতুন যাওয়া অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রশাসনিক সহায়তা দিতেন। পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি গ্রিন পার্টি থেকে একজন সিটি কাউন্সিলর ছিলেন।