শপথ ভঙ্গকারীর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১২-১৯ ১৮:২৪:২৪


ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে শপথ বা অঙ্গীকার । কাউকে কথা দিলে বা ওয়াদা দিলে তা রক্ষা করতে হবে। ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতে কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে। অনেকে ওয়াদা করেন মাজার বা পীর অথবা সন্তান বা কারো মাথা ছুঁয়ে। এরকম কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে স্বাক্ষী বা হাজির নাজির রেখে কোনও শপথ, ওয়াদা বা অঙ্গীকার করা যাবে না। কেউ তা করলে তা শিরক হবে।

এবিষয়ে হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে শপথ করে, সে অবশ্যই কুফরি বা শিরক করল।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস : ১৫৩৫)

শপথ আল্লাহ তাআলার নামে করতে হয়। কিন্তু কেউ কুরআন স্পর্শ করে শপথ করলে, সে শপথ রক্ষা করতে হবে। কারণ কুরআন আল্লাহর তাআলার পবিত্র কালাম। তাই এভাবে শপথ করাও এক ধরনের কসম।

কেউ যদি এভাবে কসম করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে। কুরআন আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম হওয়ার কারণে কুরআনের মর্যাদা কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করা যাবে না।

আল্লাহর নামে কসম করলে যেমন তার মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি, তেমনি কুরআন ছুঁয়ে শপথ করলেও এর মর্যাদা রক্ষা করা আবশ্যক।

কোনো ব্যক্তি আল্লাহর নামে করা শপথ ভঙ্গ করলে ‘কাফফারা’ স্বরূপ তিনটি কাজের যেকোনো একটি করতে হবে।

এক. ১০ জন দরিদ্রকে মধ্যম শ্রেণির খাদ্য সকাল-বিকেল দুই বেলা খাওয়াতে হবে। এটি অর্থমূল্যে দিতে চাইলে প্রত্যেককে পৌনে দুই কেজি গম বা তার অর্থমূল্য দিতে হবে।

দুই. ১০ জন দরিদ্রকে ন্যূনতম ‘সতর ঢাকা’ (শরীরের যতটুকু অংশ ঢাকতে হয়) পরিমাণ পোশাক-পরিচ্ছদ দান করতে হবে।

তিন. ক্রীতদাস থাকলে একজনকে মুক্ত করে দিতে হবে। কেউ যদি এ আর্থিক কাফফারা দিতে সমর্থ্য না হয়, তার জন্য কাফফারা হলো তিনটি রোজা রাখা। হানাফি মাজহাব মতে, ওই রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখতে হবে।

কেউ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে কসম করে, তাহলে তার কাফফারা হলো কালেমা ত্বাইয়েবা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি শপথ করতে গিয়ে লাত ও উজজার (আরবের মূর্তির) নামে শপথ করে বসে, সে যেন বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৩৪০৯)

অহেতুক ও অপ্রয়োজনে শপথ করা ইসলাম সমর্থন করে না। আবার শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শপথ ভঙ্গ করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। তাই শপথ করার ক্ষেত্রে অত্যধিক শতর্ক থাকা জরুরি।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ওয়াদা পালনকারী। তিনি তার উম্মতদের এ ব্যাপারে শিক্ষা দিয়েছেন।

বুখারি শরিফের হাদিসে বর্ণিত, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে চারটি দোষ থাকবে সে মুনাফিক আর যার মধ্যে এর কোনো একটি দোষ থাকবে সেও মুনাফিক- যতক্ষণ সে তা বর্জন না করে। ১. যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, ২. তার কাছে আমানত রাখলে খিয়ানত করে, ৩. কোনো ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, ৪. কারও সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়লে সীমা লঙ্ঘন করে।

সানবিডি/এনজে