শরীয়ত সম্মত পর্দার বিধান সমূহ:
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৯-০৩-১১ ১৭:১২:০৪
1) নারী তার সমস্ত শরীর ঢেকে দেবে। আল্লাহ বলেন, “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর- ৩১)
আল্লাহ আরো বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব- ৫৯)
2) পর্দার পোষাকটি যেন নিজেই সৌন্দর্যমন্ডিত না হয়। যাতে ঐ পোষাকের সৌন্দর্য ঢাকার জন্য আরেকটি পর্দার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং পর্দার উপর নকশা ও কারুকার্য খচিত থাকলে বা ঝলমলে পাথর বসানো ও রঙ্গিন হলে সে কাপড় পরিধান করবে না।
3) পর্দার কাপড় মোটা হবে। এমন পাতলা যেন না হয় যাতে কাপড়ের অভ্যন্তর থেকেও দেহ বা দেহের কান্তি দৃশ্যমান হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে দিয়েছেন, “যে সব মেয়েলোক কাপড় পরেও ন্যাংটা, পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট এবং পুরুষদেরও নিজেদের প্রতি আকৃষ্টকারীনী, তারা জাহান্নামী। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।”[মুসলিম, অধ্যায়ঃ পোশাক ও সৌন্দর্য, হা/৩৯৭১।]
একটি বিয়ের কনে আয়েশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হল। তার পরিধানে ছিল খুবই স্বচ্ছ পাতলা কাপড়। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ ধরণের পোষাক পরিধান করে, সে সূরা আন-নূরে বিধৃত বিধানের প্রতি ঈমান আনেনি।’
4) পর্দার পোষাক প্রশস্ত ঢিলা-ঢালা হবে। আঁটসাট বা সংকীর্ণ হবে না, যার দরুন দেহের উচ্চ-নীচ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠে, যদিও তা স্বচ্ছ বা পাতলা নয়। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বলেন, দেহ্ইয়া কালবী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে একটি কিবতী (মিছরের তৈরী) মোটা কাপড় উপহার দিয়েছিল। তিনি উহা আমাকে পরিধান করার জন্য প্রদান করলেন। আমি বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে পরতে দিলাম। নবীজী আমাকে বললেন, কি ব্যাপার তুমি কিবতী কাপড়টি পরিধান কর না? আমি বললাম, আমার স্ত্রীকে উহা পরিয়ে দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন ওটার নীচে অন্য একটি কাপড় পরিধান করে নেয়। কেননা আমার আশংকা হচ্ছে ঐ কাপড়ে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে পড়বে।” (আহমাদ, হাদীছটি হাসান)
5) আতর সুবাশ মিশ্রিত হবে না। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ[
“যে নারী সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয়, অতঃপর মানুষের সম্মুখ দিয়ে হেঁটে চলে- যাতে করে তারা তার সুবাশ অনুভব করে, তবে সেই নারী ব্যভিচারী।”[তিরমিযী, নাসাঈ, আবু দাউদ, ছহীহুল জামে হা/২৭০১।]
6) কাফের নারীদের পোষাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। ইসলাম কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে কাফেরদের বিরোধিতা করা। রাসূলে কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
যে লোক অপর জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ)
7) পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট পোষাক মেয়েরা পরবে না। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
]لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ[
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন এমন পুরুষকে যে নারীর সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে, এবং অভিশাপ করেছেন সেই নারীকে যে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টিকারী পোষাক পরিধান করে। (বুখারী)
8) উক্ত পোষাক যেন মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্যে না হয়। দুনিয়ার সৌন্দর্যে মানুষের মাঝে গর্ব করার উদ্দেশ্যে অতি উচ্চ মূল্যের পোষাক পরিধান করাই হচ্ছে প্রসিদ্ধির পোষাক। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
]مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ أَلْبَسَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَوْبًا ثُمَّ تُلَهَّبُ فِيهِ النَّارُ[
“যে ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ কোন পোষাক পরিধান করবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে অনুরূপ পোষাক পরিধান করাবেন, অতঃপর তাতে জাহান্নামের আগুন প্রজ্জলিত করা হবে।”[আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ্, ছহীহুল জামে হা/ ২৫২৬]