আইপিও অনুমোদন ও কারসাজি বন্ধে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা!
:: আপডেট: ২০১৯-০৫-২২ ১০:৫১:১৭
ধারাবাহীক দরপতন ঠেকাতে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক-সংক্রান্ত প্রায় দুই সপ্তাহের বিদেশ সফর শেষে শবেবরাতের ছুটির দিনেই পুঁজিবাজারের স্বর্থে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে উপিস্থত ছিলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী, স্বপন কুমার বালাসহ কমিশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকেরে একটি সূত্র সান বিডিকে বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন পুঁজিবাজারের বিষয়ে সরকার ইতিবাঁচক। পুঁজিবাজার খারাপ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাজারের উন্নয়নে সরকার নজর দিয়েছে।
বৈঠকেরে একটি সূত্র সান বিডিকে বলেন,গত ২৭ জানুয়ারি থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত লাগাতার দরপতনের প্রেক্ষাপটে বিএসইসির কাছ থেকে পুরো বিষয় অবহিত হন অর্থমন্ত্রী। পরে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের বিষয়ে প্রায় দীর্ঘ ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট আলোচনা করেন তিনি। আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সময়ের দরপতণের কারণ, আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়ে কী করা যায়, আইপিও বাজারে, কারসিজি চক্রে কারা জড়িত, তাদের শাস্থির বিষয় এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য পণ্যের বহুমূখী করণ করার বিষয়টি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসের দরপতনে বিনিয়োগকারী ও ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বাজার ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত যাতে আর নতুন কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) দেয়া না হয়। তবে অর্থমন্ত্রী এই কথার পক্ষে নয়। তিনি কমিশনকে বলেন, আইপিও দিবেন; তবে কারো অনুরোধে নয়। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে ভালো কোম্পানির আইপিও দিবেন।
কারসাজির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক সময়ে যে অবস্থা বিরাজ করছে; এর পেছনে কারো না কারো হাত আছে। এদেরকে খোঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে তাদেরকে দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্থি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে যাতে কারো মূখের দিকে চেয়ে শাস্থি দেওয়া না হয়।
এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা (সাংবাদিকরা) খুঁজে বের করবেন, কাদের কারণে করা যাচ্ছে না। কেউ না কেউ আছে, যারা ছিয়ানব্বইতে এবং ২০১০-এ ধস নামিয়েছে আপনারা তাদের খুঁজে দেখেন।’ শেয়ার কারসাজি করে মুনাফার তুলনায় জরিমানা কম হয়- এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এমন তথ্য আমার জানা নেই। আমি জানি, সুন্দর করে আইন করা আছে। যারা আইন অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।’
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের ঝুকি কমাতে দ্রুত পুঁজিবাজারের পণ্যের বহুমূখী করণ করার নির্দেশ দিয়েছে তিনি। এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রীকে বলেন, বন্ড মার্কেট, স্মলক্যাপ মার্কেটসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। শুধু চালু করােই বাকী। বৈঠকে বাজারে ভালো শেয়ার আনার বিষয়ে জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ার না আসায় বাজারে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে কি-না- এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো কোম্পানি আসবে না। কারণ ভালোগুলো খারাপগুলোর সঙ্গে মিশে যায়। এগুলো আলাদা করার ব্যবস্থা করা হবে।’
বৈঠক শেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খাইরুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাজারে আস্থার সংকট থাকা উচিত না। বাজারের অংশগ্রহণকারী হয়ে কেউ যদি আস্থার সংকটের কথা বলে থাকেন, তাহলে তিনি অন্যায় কাজ করেছেন। কারও পারসেপশন (ধারণা) দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করা উচিত না। এমন কিছু এখন ঘটেনি, যার জন্য আস্থার সংকট হবে।
বাজার নিয়ে যা-তা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে খায়রুল হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারতেও সূচকের পতন হয়। কিন্তু সেসব দেশে কেউ বিক্ষোভ করে না।