বাংলাদেশেল টার্গেট ১৩২ রান

আপডেট: ২০১৫-১১-১৩ ১৯:১৯:৫৩


2015_10_29_21_54_49_VAxgbPOGF3Yf6zh5uU3An4tPoYyVcE_originalটি২০, ২০ ওভারের খেলা। দর্শকরা গ্যালারিতে একটু নড়ে-চড়ে বসতেই এক ইনিংসের খেলা শেষ। এরই মধ্যে ঘটে যায় নানা ঘটন-অঘটন। মাশরাফি, মুস্তাফিজ, আল আমিন আর অভিষিক্ত জুবায়ের হোসেনের তোপের মুখে বেঘোরে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরা। ব্যাতিক্রমও যে ছিলেন না তা নয়। ম্যালকম ওয়ালার। বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন। ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি। ৩১ বলে ৬৮। তার এই ইনিংসের ওপর ভর করেই মূলতঃ ১ম টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ১৯.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ১৩১ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে।

টস জিতে কেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন মাশরাফি বিন মর্তজা, সেটা নিজেই প্রমাণ দিলেন। খেলা শুরু হতে না হতেই জিম্বাবুয়ের ওপর প্রথম আঘাতটা হানলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজেই। ইনিংস ওপেন করতে এলেন মাশরাফি নিজেই এবং শুরু থেকেই করছিলেন দুর্দান্ত বোলিং। ফলে সাফল্য পেতেও অপেক্ষা করতে হলো না তাকে। প্রথম ওভারের ৫ম বলেই তুলে নিলেন জিম্বাবুয়ে ওপেনার সিকান্দার রাজার উইকেট।

গত কয়েকটি সিরিজে দেখা যাচ্ছিল সাধারণত মুস্তাফিজকে দিয়েই বোলিং ওপেন করান মাশরাফি। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়াটাও এখন যেন প্রতিপক্ষের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মাশরাফি তো আর যেমন তেমন কোন অধিানয়ক নন। খেলায় বৈচিত্র্য আনতে যিনি বদ্ধপরিকর। কিংবা প্রতিপক্ষকে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ওপর স্থির থাকতে দেওয়া যে তার রণ কৌশলের অংশ নয়!

সুতরাং মুস্তাফিজ নয়, বল হাতে ইনিংস শুরু করার দায়িত্বটা নিজেই নিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং শুরুতেই জিম্বাবুয়ে ইনিংসের ওপর আঘাত হানলেন তিনি। ওভারের প্রথম তিন বল ডট গেলেও, চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে দেন সিকান্দার রাজা। তখনও কি তিনি জানতেন, পরের বলটায় কি ধার নিয়ে আসছেন মাশরাফি।

স্লোয়ার দিয়েছিলেন মাশরাফি। প্রলুদ্ধ হয়ে বলটি খেলতে যান রাজা। একেবারে মাঝ ব্যাটে। কিন্তু স্লোয়ার হওয়ার কারণে বল খুব বেশি উঠলো না। মিড অফে একেবাওে জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্যাচটা লুফে নিতে লিটন কুমার দাসের মোটেও কষ্ট করতে হলো না।

অধিনায়ক যদি এক প্রান্তে নিজে জ্বলে ওঠেন, তখন পুরো দলই আলোকিত হতে বাধ্য। হলেনও। অপরপ্রান্তেও মুস্তাফিজকে নয়, বল করতে তুলে দিলেন আল আমিনের হাতে এবং অধিনায়কের মত আগুন ঝরালেন আল আমিনও।

দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলেই অপর ওপেনার রেগিস চাকাভাকে ক্যাচ তুলে দিতে বাধ্য করেন আল আমিন। উইকেটের পেছনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। তবুও আবেদন করতে হয়েছিল এবং কিছুক্ষণ ভেবে আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার।

তৃতীয় ওভারে আবারও বল হাতে  বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রথম ওভারের চেয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভাওে যেন আরও ধারাল মাশরাফির বল। ওভারের দ্বিতীয় বলটি করতে আসলেন তিনি। দিলেন ফুল লেন্থের বল। এলটন চিগুম্বুরা একেবাওে জায়গায় দাঁড়িয়ে চেষ্টা করলেন কাট করতে। কিন্তু নীচু হয়ে আসা বলটিতে ব্যাটের ছোঁয়াও লাগাতে পারেননি। সোজা আঘাত হানলো মিডল স্ট্যাম্পে।

মাত্র ১০ রানেই ঘটলো তৃতীয় উইকেটের পতন। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে জিম্বাবুয়ে। কোন রান না করেই ফিরে গেলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। অথচ, ওয়ানডে সিরিজে দল হিসেবে ব্যার্থ হলেও বেশ ভালো ব্যাটিং করেছিলেন সফরকারী দলের অধিনায়ক। কিন্তু টি২০তে এসে মাশরাফির দুরন্ত বোলিংয়ের সামনে বোকা বনে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেয়া ছাড়া আর তার কিছুই করার ছিল না।

১০ রানে তিন উইকেট পড়ার পর জিম্বাবুয়ে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব বর্তায় দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস এবং ক্রেইগ আরভিনের ওপর। দু’জন মিলে ২৮ রানের জুটি গড়ে সে চেষ্টাটা করছিলেনও। কিন্তু মাশরাফির বার বার বোলার পরিবর্তণে দিশেহারা হয়ে যায় জিম্বাবুয়েও। ৯ ওভার শেষ না হতেই ৬জন বোলার ব্যবহার করেন তিনি। ফলে নবম ওভারের চতুর্থ বলে নাসিরের হাতেই উইকেট দিতে বাধ্য হলেন শন উইলিয়ামস।

নাসির দেখলেন ব্যাটসম্যান এগিয়ে আসছেন। সুতরাং বলটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন তিনি। কিছুটা স্লোয়ার টাইপের। এগিয়ে এসে খেলতে যান উইলিয়ামস। বলের ফ্লাইট পুরোপুরি মিস করেন তিনি এবং বল গিয়ে সোজা আঘাত হাতে লেগ স্ট্যাম্পে। ৩৮ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। ২১ বলে ১৫ রান করে ফেরেন উইলিয়ামস।

পঞ্চম উইকেট জুটিতে বেশ চড়াও হয়ে খেলা শুরু করেন ক্রেইগ আরভিন আর ম্যালকম ওয়ালার। অভিষিক্ত জুবায়ের হোসেনের এক ওভারে দুটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারির মারও মারেন ওয়ালার। দু’জন মিলে গড়েছিলেন ৬৭ রানের জুটি। অবশেষে এই জুটির ওপর আঘাত হানতে সক্ষম হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ক্রেইগ আরভিন সুইপ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি। ফলে সরাসরি বোল্ড।

১৬তম ওভারে জুবায়েরর হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। প্রথম ওভারে চরম মার খাওয়া জুবায়েরের ওপর আবারও আস্থা রাখলেন মাশরাফি। এবার আর হতাশ করেননি এই লেগ স্পিনার। এক ওভারেই তুলে নিলেন ২ উইকেট। প্রথমে ওভারের দ্বিতীয় বলে লুক জংউইকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। জুবায়েরর স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বল রিভার্স সুইপ করতে যান জংউই। কিন্তু বল গিয়ে আঘাত হানে তার পায়ে। ফলে এলবির আবেদন এবং আম্পয়ারও সাড়া দিলেন তাতে।

ওভারের শেষ বলে আবারও জ্বলে উঠলেন জুবায়ের। এবার তার শিকার মাদজিভা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজ দেশে টি২০ অভিষেক হওয়া মাদজিভা জুবায়েরের বল সহজ মনে করে গেলেন খেলতে। কিন্তু ক্যাচ তুলে দিলেন লং অফে। ক্যাচ ধরলেন নাসির হোসেন। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেয়ার পর জুবায়ের দ্বিতীয় ওভারে দিলেন মাত্র ৩ রান এবং নিলেন ২ উইকেট।

এক প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকলেও অপর প্রান্তে বাংলাদেশের বোলারদেও জন্য বিবিষিকা তৈরী করে যাচ্ছিলেন ম্যালকম ওয়ালার। ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করা জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান ৩১বলে করে ফেলেছেন ৬৮ রান। অবশেষে মুস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হলেন তিনি। মুস্তাফিজের বল খেলতে গিয়ে তুলে দিলেন ডিপ মিডউইকেটে। সেখানে ফিল্ডার লিটন দাস। সহজেই ক্যাচটা লুফে নিলেন তিনি। ১২২ রানে পড়ল জিম্বাবুয়ের অষ্টম উইকেট।

উইকেট পতন অব্যাহত রেখেছে জিম্বাবুয়ে। পরের ওভারে আল আমির বলে আবারও আউট জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যান। এবার আল আমিনের শিকার হলেন গ্রায়েম ক্রেমার। ৪ বলে তিন রান করে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন জিম্বাবুয়ের এই ব্যাটসম্যান।

শেষ ওভারটা করার জন্য মাশরাফি বল তুলে দিলেন মুস্তাফিজের হাতে। ব্যাটসম্যান চিসোরো এবং পানিয়াঙ্গারা। জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট। মুস্তাফিজও নিজের আসল ফর্মে। তবুও দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি খেয়ে বসলেন। তৃতীয় বলটা দিলেন একেবারে ইয়র্কার। পানিয়াঙ্গারার মত ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে এই বলটি ফেরানো বেশ কঠিন। পারলেনও না। লাগালেন পায়ে। ফলে এলবির আবেদন এবং আম্পায়ারও তুলে দিলেন আঙ্গুল। ১৯.৩ ওভারেই অলআউট জিম্বাবুয়ে। সংগ্রহ হলো ১৩১ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবারই কিছু না কিছু অবদান রয়েছে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দেয়ার ক্ষেত্রে। মোট ৬জন বল করেছেন। উইকেট পেয়েছেন সবাই। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, আল আমিন, মুস্তাফিজুর এবং জুবায়ের হোসেন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন নাসির হোসেন এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

টস: বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে: ১৩১/১০, ১৯.৩ ওভার (ওয়ালার ৬৮, আরভিন ২০, উইলিয়ামস ১৫, চিসোরা ৭*, সিকান্দার রাজা ৪, পানিয়াঙ্গারা ৪; মাশরাফি ২/২০, আল আমিন ২/২০, মুস্তাফিজ ২/১৬, জুবায়ের ২/২০, নাসির ১/২৯, মাহমুদুল্লাহ ১/১৮)।