সুবিধাভোগীদের পক্ষেই বাজেট : সিপিডি
সান বিডি ডেস্ক আপডেট: ২০১৯-০৬-১৫ ১২:২৬:০০
যারা অর্থনীতির অপশাসনের সুবিধাভোগী তাদের পক্ষেই বাজেট যাচ্ছে এমন মন্তব্য করেছেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ।
আজ শুক্রবার (১৪জুন) ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, তৌফিকুল ইসলাম খান, ড. ফাহমিদা খাতুন, আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ প্রমুখ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি।যারা আয় করে তাদের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়নি। কিন্তু যারা সম্পদের উপর নির্ভরশীল তাদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। কেন দেয়া হয়েছে, কি জন্য দেয়া হয়েছে, আমাদের কাছে এটি বোধগম্য নয়। এটি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গেও মিলে না।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা আগের বছর একই ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ব্যবসায়িক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি করা হয়েছিল ।
তিনি আরও বলেন, দেশের মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা এ বাজেট থেকে খুব বেশি উপকৃত হবে না। কারণ যারা উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না, বিদেশে গিয়ে এসব সেবা নিতে পারে না। তাদের জন্য আমরা কি মানসম্পন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের শিশুরা উচ্চমানের শিক্ষা পাচ্ছে কি-না। চিকিৎসা করাতে পারছে এটাই বড় বিষয়। দেশের মধ্যবিত্তদের জন্য আমরা কি করতে পারবো, সেটার উপর নির্ভর করছে, আমাদের উচ্চ মধ্যম আয়ে ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে যে ঘাটতি রয়েছে তা বৈদেশিক ঋন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মিটাবে যার ফলে ব্যাংকে তারল্য সমস্যা দেখা দিবে ।এটি একটি অর্থনীতির জন্য অসহনীয় সংকতে ।
ফেলো বলেন, ব্যাংক খাত থেকে যারা সুবিধা নিয়েছেন, তারা ব্যাংকিং কমিশন হোক চান না। কমিশন হলে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। তথ্য উপাত্তের সমস্যা আছে, সেগুলো প্রকাশিত হবে, জবাবদিহীতা বাড়বে। যারা এ খাত থেকে অন্যায্য সুবিধাগুলো নিয়েছেন, তারা এ পরিবর্তনগুলো আনতে দিতে চান না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষাখাতে গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বাজেট রাখা হয়েছে । এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বাজেট নিম্মমুখী ।
তিনি বলেন, একটি দেশ উন্নতির শিখরে আহরন করতে চাইলে তার প্রধান প্রথম সোপান হচ্ছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য । এই দুটি খাত বাজেট বৃদ্ধি না করে কিভাবে সরকার উন্নয়ন করতে চায় তা আমার বোধগম্য নয় ।
করারোপ এর কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ১কোটি লোক থেকে কর নেওয়া হবে । কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দিলেন কত শতাংশ ছাড় দিলেন এবং কোথায কোথায় করারোপ করলেন স্পষ্ট কোন তথ্য নাই । আসলে বাজেট মানে বাতাসের ভিতর আশ্বাসের বাণী ।
পুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের সুশাসনের সমস্যা অর্থ দিয়ে সমাধান করা যাবেনা । আগে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে ।
ফেলো বলেন, বাজেটে বৈষম্য স্পষ্ট । যে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পায় সে সমাজ বহুদিন টিকেনা ।আমাদের মনে রাখা উচিত এই বৈষম্যের কারনেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে ।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বর্তমানে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ওপর নিট সম্পদ থাকলে সারচার্জ প্রদান করতে হয়। সারচার্জ আরোপের এ নিম্নসীমা বৃদ্ধি করে ৩ কোটি টাকায় নির্ধারণের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
সানবিডি/ এমএফইউ